বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১২:৪৭ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
১ ফেব্রুয়ারি থেকে মাসব্যাপি বইমেলা : আর মাত্র বাকি তিন দিন : সিসি ক্যামেরাসহ নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে থাকবে পুরো বইমেলা প্রাংগণ

একুশে বার্তা ডেক্স :  আরো একটি প্রাণের উৎসব অমর একুশে বইমেলা ১ ফেব্রুয়ারি হতে মাসব্যাপি  শুরু হতে আর বাকি মাত্র তিন দিন। বাংলা একাডেমি, লেখক, প্রকাশকরা এ মেলা সফল করতে রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছেন। বইপ্রেমিরাও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। অন্যদিকে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য লেখক-প্রকাশকরা বসে নেই, তারাও চেষ্টা করছেন নতুন কিছু উপহার দিতে। তবে সংখ্যা নয়, মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
বাঙালির প্রাণের অনেক উৎসবের মধ্যে বইমেলা অন্যতম। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে প্রতি বছরের মতো এবারো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এ মেলা। তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে গতবারের তুলনায় এবারো বাড়ছে মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। বাড়ছে মেলার স্টল ও ইউনিট, বাড়ছে প্যাভিলিয়নের সংখ্যা। এ প্রথম লেখক ও প্রকাশকদের মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশের জন্য পৃথক গেট থাকছে। এ গেটে বয়ষ্ক মানুষ ও সাংবাদিকরাও প্রবেশ করতে পারবেন। তবে বইমেলার পরিসর বাড়লেও পাঠক বাড়ছে কি-না, বইয়ের মান বাড়ছে কি-না সে প্রশ্ন অনেকের। বইমেলা মূলত লেখক-পাঠক এবং প্রকাশকের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে। সমৃদ্ধ হচ্ছে পাঠক বইপ্রেমী মানুষ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, সামগ্রিকভাবে এর অবদান কতটা তা নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন। লেখক-প্রকাশকগণ বলেছেন, সময়ের সাথে সাথে মেলার পরিধিসহ সুযোগ-সুবিধা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ও পাঠক। দেশের বর্তমান জনসংখ্যা ওই সময়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। বর্তমানে স্কুল-কলেজ, বিশ^বিদ্যালয়ের সংখ্যার সাথে বেড়েছে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীও। গত ৩৫-৪০ বছর আগে যে প্রত্যাশা নিয়ে বইমেলা শুরু, তা শতভাগ পূরণ হয়েছে এটা অনেকেই মনে করছেন না। তাদের মতে, আগে বইমেলার যে গাম্ভীর্য ছিল, তা এখন কমে এসেছে।
লেখক, সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদ ইনকিলাবকে বলেন, এখন প্রকাশকরা চাচ্ছেন বইয়ের সংখ্যা বাড়াতে, মান নয়। এখনকার বইমেলায় হুজুগের মতো বই বের হচ্ছে। আগে অল্প বই বের হলেও তা ছিল মানসম্পন্ন। এখন বইমেলায় অংশ নিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক বই লাগে। অনেক যাচ্ছে, তাই বইয়ের চেয়ে ভালো বই অল্পও ভালো। মেলার প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হওয়ার পথে। মাঠ প্রস্তুতি, মাঠের পরিধির হিসাব-নিকাশ করছেন বাংলা একাডেমির কর্তৃপক্ষ।
মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. জালাল আহমেদ বলেন, মেলাকে আগের চেয়ে আরো সুন্দর করে পরিচালনার জন্য বেশ আগেভাগেই প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এবারের মেলার প্রস্তুতিপর্বের মূল বিষয় হলো মেলার পরিসর বৃদ্ধি করা। তবে ঠিক কত বর্গফুট স্থানে বৃদ্ধি পাবে, সেটি এখনো চূড়ান্ত করা যায়নি। কারণ, স্টল ও ইউনিটের সংখ্যা চ‚ড়ান্ত হওয়ার পরই মেলার পরিসর চূড়ান্ত করা হবে। জানা যায়, গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বইমেলায় অংশ নিতে আগ্রহী প্রকাশনা সংস্থাগুলো আবেদনপত্র জমা দিয়েছে। গত বছরের বইমেলার নীতিমালা অনুযায়ী এবারের মেলায় অংশ নেয়ার জন্য তথ্য ফরমের সাথে লেখকের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিপত্রের কপি, লেখকদের রয়্যালিটি প্রদানের প্রমাণপত্র জমা দিতে হয়েছে। এ ছাড়া ও মেলার স্টল ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। গতবারের তুলনায় এবার প্যাভিলিয়নের ভাড়া বাড়ছে ২০ শতাংশ। চার ইউনিট ১০ শতাংশ ও তিন ইউনিট পাঁচ শতাংশ হারে। তবে এক ও দুই ইউনিটে স্টলের ক্ষেত্রে ভাড়া বৃদ্ধি পাবে না। ড. জালাল আহমদ আরো বলেন, সারাদেশ থেকে আগত পাঠকরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে মেলায় ঘুরতে পারেন এবং বই কিনতে পারেন এ বিষয় সকল ব্যবস্থাই এবার রাখা হয়েছে। পাঠকের জন্য মনোরম পরিবেশের পাশাপাশি তাদের বসার স্থান বাড়ানো হচ্ছে এবং পর্যাপ্ত ও উন্নতমানের টয়লেটও স্থাপন করা হচ্ছে। এবার মোড়ক উন্মোচনের মঞ্চ আরো দৃষ্টিনন্দন ও আরো বড় করে তৈরি করা হবে। সেই সঙ্গে নতুন বইয়ের স্টলও বড় করা হবে। এবারো মেলা চলবে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। সে সাথে এবার অগ্নিবীমার পাশাপাশি সাইক্লোন ও দাঙ্গা-হাঙ্গামাজনিত সৃষ্ট সমস্যারও বীমা হচ্ছে। এবার এ মেলায় কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থার করা হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণ থেকে টিএসসি ও শামসুন্নাহার হল হয়ে শাহবাগ মোড় এবং অন্যদিকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় থাকবে। সে সাথে বাংলা একাডেমির অভ্যন্তরে ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আটটি আর্চওয়ে বসানো হবে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মেলার কঠোর নিরাপত্তার পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন কর্মসূচি ও দর্শক উপভোগ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে। বইয়ের মান নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ড. জালাল আহমেদ বলেন, সেটি দেখার জন্য বিচারকমন্ডলী রয়েছেন, তারা বিচার-বিশ্লেষণ করে রিপোর্ট দেবেন। তবে ধর্মীয় আঘাত ও রাষ্ট্রদ্রোহী, নৈতিক স্খলন জনিত কোনো বই বিক্রি ও প্রদর্শন করা যাবে না। তিনি প্রত্যাশা করেন, মেলায় এবার প্রকাশকরা মানসম্পন্ন বই দিয়ে প্রমাণ করবেন, যা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে, বই পড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়াবে।

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।