শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩৫ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
জিএমপি : মোল্লা নজরুলকে বদলির গুঞ্জন

নিউজ ডেক্স : গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার হিসেবে মোল্যা নজরুল ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পেরোনোর আগেই জনবান্ধব নানা পদক্ষেপ নিয়ে নগরবাসীর আস্থা অর্জন করেছেন। অপরাধের বিরুদ্ধে তার জিরো টলারেন্স নীতির কারণে দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্প এলাকা হিসেবে পরিচিত গাজীপুর মহানগরে চাঁদাবাজি, মাদকের বিস্তারসহ সব অপরাধের মাত্রা কমেছে। এতে স্বস্তিতে আছেন স্থানীয়, ব্যবসায়ী শ্রমজীবী মানুষেরা। এমন প্রেক্ষাপটে হঠাৎ গুঞ্জন উঠেছে শিগগিরই গাজীপুর মেট্রোপলিটনের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে মোল্যা নজরুলকে। নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। একের পর এক প্রশংসনীয় উদ্যোগ নেওয়ার পরও কেন তাকে সরিয়ে দেওয়ার পায়তারা চলছে তা নিয়েও চলছে তুমুল সমালোচনা। প্রভাবশালী কোনও মহলকে অনৈতিক সুবিধা না দেওয়ার ফলেই কী সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে নজরুলকে? প্রশ্ন নগরবাসী।

গাজীপুরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোল্যা নজরুলের নেতৃত্বে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবার ঈদুল ফিতরে ঈদযাত্রায় গাজীপুরে খুব একটা ভোগান্তি পোহাতে হয়নি ঘরমুখো মানুষকে। জিএমপি কমিশনারের আন্তরিকতায় এবার ঈদের আগে বেতন-বোনাস নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষের মতো ঘটনাও আগের চেয়ে কমেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া সামাজিক ও মানবিক নানা উদ্যোগে সম্পৃক্ত হয়ে পুলিশকে সত্যিকার অর্থে জনগণের বন্ধুর কাতারে নিয়ে যেতে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছেন নজরুল।

এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) গাজীপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার শিশির বলেন, মোল্যা নজরুল কমিশনার হয়ে আসার পর গাজীপুর মহানগরকে একটি আদর্শ ও নিরাপদ শহর হিসেবে গড়ে তুলতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। গত কয়েক দশকে বারবার উদ্যোগ নিয়েও সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান গাজীপুরকে যানজটমুক্ত করতে পারেনি। এই যানজটের কারণে কেবল গাজীপুরের বাসিন্দারাই নন, এই জেলা ওপর দিয়ে যাতায়াতকারী অন্যান্য অঞ্চলের মানুষকেও দুর্বিষহ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। মোল্যা নজরুলের আন্তরিকতার কারণে ভয়াবহ যানজট থেকে মুক্তি পেয়েছে গাজীপুরের মানুষ।  এছাড়া অপরাধের বিরুদ্ধে তার জিরো টলারেন্স নীতির কারণে গাজীপুরে মাদক, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধের মাত্রাও কমে এসেছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির কারণে নগরের বাসিন্দারাও স্বস্তিতে আছেন। সামনে সিটি নির্বাচন, এরপর জাতীয় নির্বাচন- এমন একটি সময়ে মোল্যা নজরুলকে গাজীপুর থেকে সরিয়ে নেওয়াটা খুব দূরদর্শী সিদ্ধান্ত হবে না বলেই মনে করি। ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করতে না পেরে অনেকে হয়তো কমিশনারের ওপর ক্ষিপ্ত। কিন্তু নীতিনির্ধারকদের উচিত সমষ্টিগত স্বার্থের কথা বিবেচনা করে মোল্যা নজরুলকে গাজীপুরের দায়িত্বে বহাল রাখা।

মোল্যা নজরুলের বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা করে গাজীপুর মহানগর সড়ক পরিবহণ শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, বর্তমান কমিশনার দায়িত্ব নেওয়ার পর অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে নানা পদক্ষেপ নিয়ে গাজীপুরকে যানজটমুক্ত করতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। এর সুফল পাচ্ছে পরিবহন খাতের মালিক, চালক ও শ্রমিকরা। আগে যানজটের কারণে এক ট্রিপ সম্পন্ন করতো যে সময় লাগতো এখন সেই সময়ে অন্তত দুটি ট্রিপ দেওয়া যাচ্ছে। এতে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের আয় বেড়েছে, যাত্রীরাও ভোগান্তি থেকে রেহাই পেয়েছেন। এ ছাড়া রাস্তা দখলমুক্ত করার পাশাপাশি পরিবহন খাতের দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা চাঁদাবাজিও বন্ধ হয়েছে মোল্যা নজরুলের উদ্যোগে। এক শ্রেণির লোক অনৈতিক সুবিধা আদায় করতে না পেরে তার পিছু লেগেছেন। তাদের তৎপরতার কারণে পুলিশের একজন চৌকষ কর্মকর্তাকে হুট করে তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিলে তা বাজে নজির হিসেবে বিবেচিত হবে, যা মোটেও কাম্য নয়।

ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে চলাচলকারী বিভিন্ন বাসের চালক ও শ্রমিকেরা জানান, ব্যাটারিচালিত অবৈধ অটোরিকশার দৌরাত্ম্যে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত যেতে আগে দুই ঘণ্টা লাগতো। পুলিশের উদ্যোগে মহাসড়কে অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণের পর গত কয়েকমাস ধরে এই ভোগান্তি কমেছে। এখন এই রাস্তা পাড়ি দিতে সর্বোচ্চ আধা ঘণ্টা সময় লাগছে। এই উদ্যোগের ফলে এবার ঈদে ভোগান্তি ছাড়াই গাজীপুর পাড়ি দিতে পেরেছে ঘরমুখো মানুষ। এ ছাড়া রাস্তাঘাট দখলমুক্ত হওয়ায় পথচারীরাও নির্বিঘ্নের চলাফেরা করতে পারছেন।

শুধু পরিবহন খাতের নয়, তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকেরাও সন্তুষ্ট মোল্যা নজরুলের নানা পদক্ষেপে। গাজীপুর মহানগর স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি রেবেকা আক্তার বলেন, মোল্যা নজরুল একজন শ্রমিকবান্ধব মানুষ। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিতের প্রতিটি উদ্যোগে তাকে পাশে পেয়েছি। ঈদের আগে বেতন-বোনাস নিয়ে গাজীপুরের বিজিন্ন কারখানায় প্রতিবছরই শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। কিন্তু শ্রমিকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর প্রতি জিএমপি কমিশনারে আন্তরিকতা ও মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সুমম্পর্ক বজায় রাখতে তার নানা পদক্ষেপের কারণে এবার শ্রমিক অসেন্তাষের মতো ঘটনা কমেছে। এমন সৌহার্দ্য বজায় রাখতে মোল্যা নজরুলকে গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনরারের দায়িত্বে রাখা একান্ত জরুরি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মোল্যা নজরুলকে গাজীপুর থেকে বদলির আদেশ হয়েছে। শিগগিরই এ সংক্রান্ত আদেশ জারি হবে। তবে মোল্যা নজরুলকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার উপায় আপাতত নেই। কারণ আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী তফসিল ঘোষণার পর কোনও কর্মকর্তাকে বদলির এখতিয়ার কেবলই নির্বাচন কমিশনের। নজরুলের বদলির জন্য নির্বাচন কমিশনে সুপারিশ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে একটি সূত্র। যদিও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছেন, এখনো এমন কোনও সুপারিশের বিষয়ে তাদের জানা নেই।

এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের একটি সূত্র বলছে, ভোটে প্রভাব ফেলতে পারেন এমন আশঙ্কা বা সুনির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ না থাকলে নির্বাচনের আগে কোনও কর্মকর্তাকে বদলির কোনও যৌক্তিকতা থাকতে পারে না।

সিটি নির্বাচনের বাকি এক মাসেরও কম সময়। এরপর ব্ছরের শেষাংশে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এমন একটি সময়ে গাজীপুরের পুলিশ কমিশনারকে বদলির এই তৎপরতা কেন তা নিয়ে নগরবাসীর মনে জেগেছে নানা প্রশ্ন। তারা মনে করছেন, জনবান্ধব কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় একটি গোষ্ঠীর রোষাণলে পড়েছেন নজরুল। তাদের তোড়জোরের কারণেই নজরুলকে সরানোর চক্রান্ত শুরু হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকাই সিনেমার নায়িকা মাহিয়া মাহির স্বামী গাজীপুরের রাকিব সরকারের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে ফেসবুক লাইভে এসে জিএমপির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিতর্কিত মন্তব্য করেন মাহি। এ ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় মাহিকে গ্রেপ্তারও করা হয়। সেই ঘটনার জের ধরে বদলির চেষ্টা চলছে বলে ধারণা অনেকের। স্থানীয় একাধিক সূত্র বলছে, মূলত সড়ক যানজটমুক্ত করতে গিয়ে মূল সড়কে অবৈধ অটোরিকশার চলাচল নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবহণ খাতে চাঁদাবাজি ঠেকাতে গিয়েই প্রভাবশালী মহলের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন জিএমপি কমিশনার। সেই ক্ষুব্ধ অংশে রয়েছেন রাকিব সরকারের দুই ভাই। তারা হলেন গাজীপুর মহানগর শ্রমিক দলের আহবায়ক এবং ১৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফয়সাল সরকার এবং গাজীপুর জেলা পরিবহন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান সরকার।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।