রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৮:৩৫ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই হতে হবে

মুনশী আবদুল মাননান  : অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতীয় দাবি এবং আন্তর্জাতিক মহলের প্রত্যাশা। অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পূর্বশত, হলো নির্বাচনের মাঠ হতে হবে সমতল, যেখানে সব দল সমান সুযোগের অধিকার লাভ করবে। কোনো দল পূর্ণ সুযোগ ভোগ করবে আর কোনো দল সুযোগ থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত থেকে যাবে, এটা হবে না। নির্বাচনের প্রচারণা থেকে শুরু করে সভা-সমাবেশ, মিটিং-মিছিল ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই প্রত্যেক দলের সমান অধিকার ও সুযোগ থাকতে হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই কেবল নির্বাচন কমিশন সব দলের সমান সুযোগের বিষয়টি দেখবে বা নিশ্চিত করবে, এটা সমর্থনযোগ্য নয়। গণতন্ত্রের মূল স্পিরিটের সঙ্গে এ ধারণার বৈপরীত্য রয়েছে। গণতন্ত্র, সব সময় সব দলের সমঅধিকার ও সমসুযোগের কথা বলে। না হলে গণতন্ত্র কাঙ্খিত রূপে বিকশিত হতে পারে না। কয়েকদিন আগে ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পক্ষে তার দেশের অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, আমরা চাই অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য এবং সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। বাক স্বাধীনতা, সংগঠন করার অধিকার ও সংগঠিত হওয়ার অধিকার গণতন্ত্রের জন্য দরকার। প্রয়োজন সহিংসতামুক্ত নির্বাচন। এটি কেবল নির্বাচনের দিন নয়, সব সময়ের জন্য প্রযোজ্য। অথচ চলমান বাস্তবতা তো এই যে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ পুরোদমে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়েছে। দলের তরফে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশাল বিশাল জনসভার আয়োজন করা হচ্ছে এবং নেতৃবৃন্দ সেসব জনসভায় সরকারের সাফল্য ও কৃতিত্বের দীর্ঘ বয়ান, প্রতিপক্ষের তীব্র সমালোচনার পাশাপাশি ভোট প্রার্থনা ও উপস্থিত জনমন্ডলীর কাছ থেকে ভোটদানের ওয়াদা আদায় করে নিচ্ছেন। পক্ষান্তরে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনী প্রচারণা তো দূরের কথা, নিতান্ত সাধারণ বা মামুলী কোনো কর্মসূচীও পালন করতে পারছে না। কারান্তরীণ দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নেয়া শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন, কালো পতাকা প্রদর্র্শন ইত্যাদির মতো কর্মসূচীও পালন করতে পারছে না। পুলিশ এসব কর্মসূচী জোর করে ভন্ডুল করে দিচ্ছে। সেদিন প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচীটিও অন্যান্য কর্মসূচীর মতো বানচাল করে দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। সাম্প্রতিক এক তথ্য জানা গেছে, এ পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৭৮ হাজার এবং এসব মামলার আসামীর সংখ্যা প্রায় ১৮ লাখ।
বিএনপি দেশের প্রধান দুটি দলের একটি। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ক্ষেত্রে তার অংশগ্রহণ অপরিহার্য। সেই দলটিই যদি কিছু বলার সুযোগ না পায়, শান্তিপূর্ণ ও নিরিহ ধরনের কোনো কর্মসূচীও পালন করতে না পারে, সংগঠিত হওয়ার সব রকম অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, হামলা ও মামলায় দিশাহারা থাকে, তাহলে দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত না হয় যেমন পারা যায় না তেমনি আগামী নির্বাচনে তার স্বত:র্স্ফূত অংশগ্রহণ সম্পর্কেও সংশয়িত না হয়ে উপায় থাকে না। বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে আছে আরও ছোট-মাঝারি ১৯টি দল। বিএনপির মতো তারাও আসলে ঘরবন্দি। তারাও কোনো কর্মসূচী পালন করতে পারে না। তাদের নেতাকর্মীদেরও অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে মামলা। অবস্থাগতিকে বিএনপি যদি নির্বাচনে যেতে না পারে, তবে এসব দলও নির্বাচনের বাইরে থেকে যাবে। বিএনপি ও বিএনপিজোটের বাইরের বিরোধী দলগুলোর অবস্থাও তথৈবচ। তাদের তেমন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচী চোখে পড়ে না। নির্বাচন নিয়েও গাছাড়া ভাব লক্ষ্য করা যায়। এমতাবস্থায়, ক্ষমতাসীন দল ও তার মিত্র দলগুলোকে নিয়ে একটি নির্বাচন হতে পারে বটে, তবে তা অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। তা হবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতোই একতরফা, অগ্রহণযোগ্য ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন।
অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও বিবেচ্য বিষয় হলো, এরকম একটি নির্বাচন আদৌ করা সম্ভব হবে কি না। এবার জনগণ ভোট ও ভোটারবিহীন নির্বাচন মেনে নেবে কিনা। আন্তর্জাতিক মহলও এ ধরনের নির্বাচন স্বীকার করে নিতে রাজি হবে কিনা। এখন পর্যন্ত যে বাস্তবতা, তাতে মনে হয় না ২০১৪ সালের অনুরূপ নির্বাচন সম্ভবপর হবে। যদিও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলে আসছেন, সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কোন্ দল নির্বাচনে আসবে, কোন্ দল আসবে না, সেটা সম্পূর্ণতই তাদের নিজস্ব ব্যাপার। চাইলে আসবে, না চাইলে আসবে না। কারো আসা না আসার ওপর নির্বাচন বসে থাকবে না। তাদের কেউ কেউ অবশ্য আশা প্রকাশ করেছেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে এবং নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলকই হবে। তাদেরও বিলক্ষণ জানা আছে, বিএনপি অংশ না নিলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। কিন্তু বিএনপিকে নিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হলে তার সঙ্গে আলোচনা বা সংলাপ যেমন হওয়া দরকার তেমনি দরকার তার ওপর যে চন্ডনীতির যথেচ্ছ প্রয়োগ চলছে, তার অবসান। এই সঙ্গে তার জন্য সকল গণতান্ত্রিক অধিকার যথা: কথা বলার, সভা সমাবেশ, মিটিং-মিছিলসহ যাবতীয় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালন করার, সংগঠিত হওয়ার ও জনগণকে সংগঠিত করার সুযোগ অবারিত করা দরকার। এসব বিষয়ে সরকারের অবস্থান এখন পর্যন্ত অত্যন্ত কঠোর এবং তা অপরিবর্তনীয়ও বটে। সরকার নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা বা সংলাপে বসতে রাজি নয়। তার ওপর যে দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে, তা থেকে সরে আসারও কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তাই শুধু নয়, তার নূন্যতম গণতান্ত্রিক অধিকারও স্বীকার করা হচ্ছে না। গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানমূলক সম্পর্ক থাকা অপরিহার্য। গণতান্ত্রিক ধারা সচল ও বেগবান রাখার জন্য, অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভবযোগ্য করে তোলার জন্য এর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। সুস্থ ধারার রাজনীতি চর্চার পরিবেশই নির্বাচনের কাঙ্খিত পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারে। দেশে এখন রাজনীতি চর্চার কোনো পরিবেশ নেই, নির্বাচনের পরিবেশও নেই। সরকার এই এই পরিবেশ প্রতিষ্ঠার জন্য কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনও সরকারের পো-ধরে আছে। সরকার খুশী হয়, সরকারের সুবিধা হয় এমন কথাই বলছে নির্বাচন কমিশন। সিইসি গত বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের ব্যাপারে আলাদা করে কোনো উদ্যোগ নেয়া হবে না। আশা করি, সবাই নির্বাচনে আসবে। সিইসির এই বক্তব্যের মধ্যে ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের অভিমতেরই প্রতিফলন রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের প্রধান দায়িত্ব একটি অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। এ জন্যে যদি কোনো উদ্যোগ নেয়ায় প্রয়োজন হয়, তবে তা নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে। এভাবে সরাসরি না বলে দেয়া উচিৎ নয়। এতে নির্বাচন কমিশনের একতরফা মনোভাবই প্রকাশ পায়, যা তার ভাবমর্যাদার জন্য মোটেই অনুকূল নয়। তর্কের খাতিরে ধারা যাক, নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের তেমন কিছু করার নেই। এটা সম্পূর্ণত রাজনৈতিক ব্যাপার। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপার। সিদ্ধান্তটি ওই জায়গা থেকেই আসতে হবে। কিন্তু একথা তো স্বীকার করতেই হবে, নির্বাচনের কাঙ্খিত পরিবেশ প্রতিষ্ঠা বা সমতল মাঠ তৈরির দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। কে না জানে, সব দলের সমান সুযোগ নিশ্চিত হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন রান্বিত হয়। নির্বাচন কমিশন সেই সমতল মাঠ তৈরির ক্ষেত্রে কি করছে? আসলে কিছুই করছে না। কথা উঠেছে, একটি দল যখন জোরে-সোরে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন অন্য একটি দল গৃহবন্দি হয়ে আছে। ‘কী’-ও করতে পারছে না। সরকারের দমন-দলনের তান্ডবের মধ্যে রয়েছে দলটির নেতাকর্মীরা। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশনের কি কিছুই বলার ও করার নেই? বলার আছে, করার কিছু নেই। অন্যভাবে বলা যায়, করার ইচ্ছে নেই। নির্বাচন কমিশনের তরফে বলা হয়েছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে তার কিছু করার নেই। তফসিল ঘোষণার পর বিষয়টি দেখা হবে। বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সরকারী অর্থে ও আয়োজনে সরকারী দল নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে মর্মে একটি অভিযোগ তুলেছিলেন। বলেছিলেন, এটা নির্বাচনী বিধির লংঘন ও অনৈতিক। এব্যাপারে নির্বাচন কমিশন কিছু বলছে না। আবার বিএনপিকে ঘরোয়া সভা পর্যন্ত করতে দেয়া হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশন এরও কোনো প্রতিকার করছে না। উল্লেখ আবশ্যক, বর্তমান নির্বাচনী বিধিতে ক্ষমতাসীন সরকারের জন্য যেসব বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে তার সবটাই তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটগ্রহণের দিন পর্যন্ত কার্যকরযোগ্য। বস্তুত, এ কারণেই নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চায়। প্রশ্ন উঠতে পারে, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন কি নির্বাচনের যথোপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে? নির্বাচনের পরিবেশ স্বল্প কিছু দিনে নিশ্চিত করা মোটেই সম্ভব নয়। এটা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার, যখন আমাদের মতো দেশে নির্বাচনী আচরণ বিধি লংঘিত হয় ব্যাপক হারে ও মাত্রায়। সে পরিবেশ তৈরির কাজটি আগে শুরু করা হলে তার সুফল প্রাপ্তি সহজ হতে পারে। এজন্য প্রয়োজনবোধে নির্বাচনী বিধি সংশোধন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন সরকারকে পরামর্শ দিতে পারে, প্রস্তাব দিতে পারে। নির্বাচন কমিশনের সেদিকে খেয়াল নেই। এর আগে সিইসি বলেছিলেন, সরকার যে আইন করে দেবে, নির্বাচন কমিশন সেই আইনের মধ্যে থেকেই কাজ করবে। তার এ কথা একটি সংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানের কথা নয়, সরকারের আওতাধীন কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রধানের কথা।
নির্বাচন কমিশনের সাহস, সক্ষমতা, নিরপেক্ষতা ও আন্তরিকতা নিয়ে শুরু থেকেই বিরোধী রাজনৈতিক দল ও জনগণের মধ্যে একটা সংশয় বিদ্যমান রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের উচিৎ ছিল, এমন কিছু করে দেখানো যাতে তার প্রতি বিরোধী রাজনৈতিক দল ও জনগণের মধ্যে আস্থার ভাব তৈরি হয়। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন বরাবরই নির্বাচনের স্টেক হোল্ডার ও জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এটা যে আসলে কথার কথা মাত্র, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। নির্বাচন কমিশন বস্তুত সরকারের দেখানো পথেই হাটছে। ফলে আস্থার জায়গাটি খালিই পড়ে থাকছে। অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থার এই ব্যাপারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রশ্ন হলো, নির্বাচন কমিশন কি সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের আস্থার মধ্যে নিজেকে স্থাপন করতে সক্ষম হবে? এ জন্য নির্বাচন কমিশনকে যথার্থই উদ্যোগী হতে হবে, কাজ দেখাতে হবে।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভবপর করতে সরকারের দায়-দায়িত্ব ও ভূমিকা সবচেয়ে বেশী। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাও মোটেই কম নয়। এই দুই তরফ আন্তরিকভাবে চাইলেই প্রত্যাশিত নির্বাচন হতে পারে। রাজনৈতিক মহল ও নাগরিক সমাজ মনে করে, আর একটি ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন এ দেশে কখনোই সম্ভব হবে না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মধ্যে অনেক ব্যবধান রচিত হয়ে গেছে। তাছাড়া ইতিহাসের হুবহু পুনরাবৃত্তি কখনোই হয় না। সরকার বা ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে যখন বলা হয়, তারাও অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চান তখন বুঝতে হবে, অবস্থাটি আর আগের জায়গায় নেই। দেশের জনগণ তো বটেই, একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মহলও অবাধ, সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। জাতিসংঘ চায়, যুক্তরাষ্ট্র চায়, যুক্তরাজ্য চায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন চায়, চায় পশ্চিমা অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশও। সম্প্রতি তাদের এই চাওয়ার বিষয়টি তারা বেশ জোরালোভাবে তুলে ধরেছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র ও ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত একাধিকবার বিষয়টি সামনে এনেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা লিসা কার্টিস ঢাকায় এসে তার দেশের অবস্থানের কথা স্পষ্ট করে বলেগেছেন। এর আগে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে প্রতিনিধি দল এবং এ মাসের শুরুতে ব্রাসেলসে ইইউর জৈষ্ঠ্য প্রতিনিধি ফেদরিকো মোঘেরিনি, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন প্রমুখ অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জোর তাকিদ দিয়েছেন। বিশ্ব সংস্থা ও পশ্চিমা দেশগুলোর এই উপর্যুপরি তাকিদ বা চাপের মুখে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী কবুল করতে বাধ্য হয়েছেন যে, সরকার সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমন কি ইইউ’র কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে বিএনপির সঙ্গে কথা বলার জন্য। শুধু তাই নয়, সরকারের অন্যতম প্রভাবশালী মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ পর্যন্ত বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাটকে সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। এতে স্পষ্টই প্রতীয়মান হয়, আন্তর্জাতিক মহলের তাকিদকে উপেক্ষা করা এখন আর সরকারের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সরকারকে পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়েছিল ভারত। এবার ভারত তার পূর্বঅবস্থানে নেই। ভারতও বলেছে, সেও বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। অতএব, নির্বাচন হলে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই হতে হবে।
না হলে কি হবে, সেটা আন্দাজ করা মোটেই কঠিন নয়। সম্প্রতি দেশের রাজনীতিবিদ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও আইনবিদরা একবাক্যে বলেছেন, নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে দেশে রাজনৈতিক বিপর্যয় নেমে আসবে, মহাসংকট সৃষ্টি হবে। তাদের কথা হলো, দেশে-বিদেশে সবাই অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। আর সেটা করতে হলে নির্বাচনের কাম্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, সব দলের সমান সুযোগ প্রদান করতে হবে। কথায় বলে, ‘আকেলমন্দ কে লিয়ে ইশারাই কাফি’। সঙ্গত কারণেই আমরা আশা করতে চাই, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার ও নির্বাচন কমিশন যথোচিত ভূমিকা রাখতে দ্রুতই এগিয়ে আসবে। এমন একটি নির্বাচনী পরিবেশ গড়ে তুলবে যাতে বিএনপিসহ সব দল নির্বাচনে আসে। ‘রাজনৈতিক বিপর্যয়’ ও ‘মহাসংকট’ এড়াতে এর কোনো বিকল্প নেই।

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।