সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন চট্টগ্রামের মাটি ও মানুষের নেতা মহি উদ্দিন চৌধুরী

স্টাফ রিপোর্টার : চশমাহিলের পারিবারিক কবরস্থানে পিতা হোসেন আহমেদ চৌধুরী ও মাতা বেদুরা বেগমের পাশে সমাহিত করা হলো মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, রণাঙ্গনের সম্মুখসারির যোদ্ধা, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, চট্টলবীরখ্যাত আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে। চট্টগ্রামবাসীর মাটি ও মানুষের নেতা ও ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’ও বলা হতো তাঁকে।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের হ্যাট্টিক বিজয়ী সাবেক মেয়য়ের জানাজায় অংশ নেয় লাখো জনতা। মুক্তিযেুদ্ধের এই বীর সেনানীকে দেয়া হয় গার্ড অব অনার। গার্ড অব অনার প্রদানকালে বিউগলের করুণ সুর যখন ধ্বনিত হচ্ছিল সকলের চোখমুখ ছিল অশ্রুসজল। অশ্রুজলে ভেসে যায় লালদীঘি ময়দান। জানাজা শেষে চশমাহিলের পারিবারিক কবরস্থানে সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় চট্টগ্রামবাসীর স্বপ্নের রূপকারকে।

তিনি ছিলেন চট্টগ্রামবাসীর স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’সহ তাঁর নামে কয়েকটি বইও রচিত হয়েছে। তাঁর মৃত্যুতে গোটা চট্টগ্রাম হয়ে আছে শোকে মুহ্যমান।

এর আগে তাঁর জানাজায় অংশ নিতে ১৫ ডিসেম্বর  শুক্রবার বিকেলে সকল দিক থেকে জনস্রোত ছিল ঐতিহাসিক লালদীঘি অভিমুখে। প্রিয় নেতার জানাজায় অংশ নিতে আসা অনেকের চেহারা ছিল অশ্রুসজল। কেউ কেউ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। আন্দরকিল্লা থেকে কোতোয়ালী, জেলরোড থেকে সিনেমা প্যালেস পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। অনেকেই মূল জানাজার স্থল পর্যন্ত পৌঁছাতে না পেরে সড়কেই নামাজ আদায় করেন। শৃঙ্খলা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়। লালদীঘি মাঠের এ জানাজা উপলক্ষে নগরীর বিভিন্ন সড়কে কয়েকঘন্টার জন্য জনস্রোতের সৃষ্টি হয়। কিছু সময়ের জন্য থমকে যায় নগরীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।

চশমা হিলের বাস ভবন থেকে দারুল ফজল মার্কেটের দলীয় কার্যালয় হয়ে লালদীঘির মাঠ পর্যন্ত সড়কের দুপাশে হাজার হাজার জনতা মহিউদ্দিন চৌধুরীকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় পুরো এলাকার পরিবেশ ছিল ভারী। অশ্রুজল ছিল সকলের চোখে।

লালদীঘি মাঠে শুক্রবার অনুষ্ঠিত মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামাজে জানাজাটি ছিল চট্টগ্রামে স্মরণকালের বৃহত্তম জানাজা। বিরাট এ জনসমাগমের ফলে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নামাজে জানাজায় শরীক হয়েছেন দল মত নির্বিশেষে সকল বয়সের এবং শ্রেণী পেশার মানুষ। ফুলে ফুলে ঢেকে যায় মহিউদ্দিন চৌধুরীর কফিন। জানাজার নামাজে ইমামতি করেন মাওলানা আনিসুজ্জামান। জানাজায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পানি সম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাসান মাহমুদ, যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক, সংসদ সদস্য আফসারুল আমিন, এমএ লতিফ, আবু রেজা নদভী, নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, উত্তর জেলা সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী ,. মহিউদ্দিনের দুই পুত্র ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও বোরহান উদ্দিন সালেহীন, চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন এবং আওয়ামী লীগ ও রাজনৈতিক বিভিন্ন দল, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ এবং সর্বস্তরের মানুষ। রিক্সাচালক, পরিবহণ শ্রমিক, হকার, দিনমজুর থেকে শুরু করে সমাজের উঁচুস্তর পর্যন্ত সকল শ্রেণী পেশার মানুষের উপস্থিতি ছিল বিশেষভাবে লক্ষণীয়। মহিউদ্দিনের সকলেই কেঁদেছে। আর তিনি কাঁদিয়ে গেলেন পুরো চট্টগ্রামকে। এই মুহূর্তে অভিভাবকহীন করে গেলেন গোটা চট্টগ্রামকে।

শুক্রবার ভোর রাত সাড়ে ৩টার দিকে নগরীর ম্যাক্স হসপিটালে তিনি মারা যান। অনেক দিন ধরে হৃদরোগ, কিডনি জটিলতাসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন।

জননন্দিত নেতা মহিউদ্দিনের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পীকার শিরিণ শারমিন চৌধুরী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, এমপি, চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অঙ্গসংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ এবং এর পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক, ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে। সমবেদনা জানানো হয়েছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি।

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।