সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১০ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
কর্মস্থলে ফেরা অনিশ্চিত : দেড় লাখ নতুন ভিসার মেয়াদ শেষ হচ্ছে

নিউজ ডেক্স : চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশে ছুটিতে এসেছিলেন ইতালির সোহেল রানা। মার্চে তার ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সম্ভব হয়নি। ফ্লাইট চালু হওয়ার পরে বারবার চেষ্টা করেও টিকিট মেলাতে পারেননি। সোহেল রানা গতকাল সোমবারও গিয়েছিলেন মতিঝিল বিমান অফিসে। সেখানে ভিড়ের মধ্যে প্রায় দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে বিমানের কাউন্টার পর্যন্ত যেতে পেরেছিলেন। একজন সহকারি ম্যানেজার তাকে জানিয়েছেন, ৯ জুলাইয়ের পরে আর যদি কোনো ফ্লাইট হয় তখন তিনি একটা টিকিট পেতে পারেন। সোহেল রানা বলেন, আমি খুবই হতাশ। ইতালিতে আমি চাকরি করি। ইতোমধ্যে সেখানকার সব কিছু খুলে দেয়া হয়েছে। সময়মতো যেতে পারিনি। এখনও যদি না পারি তবে আমার জন্য কোম্পানি তো আর বসে থাকবে না। বিমানের একটা টিকিটের জন্য মাসখানেক ধরে চেষ্টা করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এতো যাত্রী। অথচ ফ্লাইট নেই। বিমান কেন ফ্লাইট বাড়ায় না, বুঝি না।
স্পেন থেকে দেশে এসে আটকা পড়েছেন পুরান ঢাকার বাসেত সরকার। ফেব্রুয়ারিতে যখন দেশে আসেন তখন করোনা ছিল না। মার্চ থেকে করোনার সংক্রমণ বাড়ায় সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়। বাসেত বলেন, করোনার কারণে এতদিন যেতে পারিনি, সেটা মেনে নিয়েছি। দীর্ঘ অচলাবস্থা কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছে পর্তুগাল, স্পেনসহ গোটা ইউরোপ। কিন্তু ফ্লাইটের অভাবে আমার মতো অনেকেই ফিরতে পারছে না। তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সরকারের কাছে আমাদের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে আবেদন করেছি। কিন্তু কিছুতেই তো ব্যবস্থা হচ্ছে না।
পর্তুগাল প্রবাসী লালবাগের বাসিন্দা জাহিদ হোসেন বলেন, আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। সময় আছে আর মাত্র ১২ দিন। এর মধ্যে ফিরতে না পারলে আর কোনোদিনও ফিরতে পারবো না। পর্তুগালে আমার বাড়ি, গাড়িসহ অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র আছে। ফিরতে পারবো না জানলে ওগুলো বিক্রি করে দিয়ে আসতাম। তাও তো কয়েক লাখ টাকা পেতাম। জাহিদ জানান, তার মতো কয়েকশ’ পর্তুগালপ্রবাসী ফিরতে পারবেন কি না সেই অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন। বিমানের টিকিটের জন্য তারা বিভিন্ন এজেন্সীতে ছুটোছুটি করছেন। বিশেষ ফ্লাইটের কথা বলে বিমানের কর্মীরা তাদেরকে আশ্বস্ত করলেও তারা এখন চোখে শুধু অন্ধকার দেখছেন।
ভুক্তভোগী কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, করোনার আগে ইউরোপের যে কোনও গন্তব্যস্থলে ইকোনোমি ক্লাসের টিকিট ছিল ৪০ হাজার টাকার মতো। সেই টিকিটের দাম এখন দুই লাখ টাকা। তাও সহজে মিলছে না। আমেরিকা এবং কানাডার জন্য এখন একটি টিকিটের দাম তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার মধ্যে, যা আগের তুলনায় প্রায় চারগুণ বেশি। এ প্রসঙ্গে আটাব সভাপতি মনসুর আহমেদ বলেন, মানুষ টিকিটের জন্য আমাদের কাছে আসছে। আমরা দিতে পারছি না। তখন খুব অসহায় মনে হয় নিজেকে। ডাইন্যাস্টি ট্র্যাভেলস লিমিটেডের মালিক এম শাহাদাত হোসেন তসলিম বলেন, প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার প্রবাসী দেশে এসে আর ফিরতে পারছেন না। তারা প্রকৃতপক্ষেই সমস্যায় পড়েছেন। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, সিভিল এভিয়েশন অথরিটির উচিত যাত্রীদের চাহিদা মেটানোর জন্য আরও বিদেশী বিমান সংস্থাগুলিকে ঢাকা থেকে চলাচল করার অনুমতি দেয়া। দেশি এয়ারলাইনসকেও তাদের ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ানো উচিত।
জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে কাতার এয়ারওয়েজ প্রতি সপ্তাহে ঢাকা থেকে ২১টি এবং এমিরেটস ২৮টি ফ্লাইট পরিচালনা করত। দুটিই এখন সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইটে সীমাবদ্ধ। এয়ার অ্যারাবিয়াকে প্রতি সপ্তাহে ঢাকা থেকে শারজাহ রুটে দুটি ট্রানজিট ফ্লাইট পরিচালনা করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। চাহিদার পরেও বিদেশি ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ানো হয়নি। বরং আগামী ৩০ জুলাই পর্যন্ত লন্ডন ছাড়া আন্তর্জাতিক সব ফ্লাইট বাতিল করেছে বিমান। একই সাথে আন্তর্জাতিক কয়েকটি রুটে নতুন করে জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
গতকাল সোমবার বিমানের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনাভাইরাসে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগামী ৩০ জুলাই পর্যন্ত লন্ডন ছাড়া ১৬ আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট বাতিল করা হলো। পরিস্থিতি উন্নতি হলে পরবর্তী সময়ে ফ্লাইট চালুর তথ্য জানিয়ে দেয়া হবে। সূত্র জানায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ১৭টি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে। এর মধ্যে ১৬টি রুটের ফ্লাইট বাতিল করায় আটকেপড়াদের আর আশার কিছু থাকলো না।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মাফিদুর রহমান বলেন, বিমানবন্দরে ভিড় এড়াতে কেবল কাতার, এমিরেটস, তুর্কি এবং এয়ার অ্যারাবিয়াকে সীমিত সংখ্যক বিমান চালনার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। আরও কয়েকটি এয়ারলাইনস ঢাকায় তাদের কার্যক্রম শুরু করার জন্য আবেদন করেছে। তিনি বলেন, আমরা কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মূল্যায়নের পরে সিদ্ধান্ত নেব। জানা গেছে, চলতি সপ্তাহে বিমানের দুবাই ও আবুধাবিতে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করার কথা ছিল। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিমানকে সেখান থেকে কোনও যাত্রী না নিয়ে যেতে বলার পরে এই সিদ্ধান্তও স্থগিত করা হয়।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মুহিবুল হক ইনকিলাবকে বলেন, বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। সমস্যাটা ক্রমে ঘণীভ‚ত হচ্ছে একথা চিন্তা করেই মঙ্গলবার (আজ) আমরা একটা মিটিং ডেকেছি। সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এই মিটিং শুরু হবে বিকাল সাড়ে তিনটায়। বিমান সচিব বলেন, আশা করছি ওই মিটিংয়ে একটা সমাধানের পথ বের হবে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের যেসব কর্মী বিভিন্ন দেশে বৈধভাবে আছেন তাদের যেন ফেরত পাঠানো না হয়, তারা যেন সেখানে কাজ করতে পারেন-এটা নিশ্চিত করাই আমাদের প্রথম কাজ। এর জন্য যা দরকার সরকারের তা-ই করা উচিত। আমরা সরকারকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
আটাবের সাবেক সভাপতি মঞ্জুর মোর্শেদ মাহবুব জানান, চলমান মহামারির দরুণ মধ্যপ্রাচ্য থেকে ছুটিতে দেশে আসা প্রায় ৬০ হাজার প্রবাসী কর্মী স্ব স্ব কর্মস্থলে ফিরতে পারছেন না। এসব প্রবাসী কর্মীর পরিবারে নেমে এসেছে চরম দুর্দশা। এ অবস্থা চলতে থাকলে শ্রমবাজারে ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে বিমান বিশেষ ফ্লাইট চালু করলেও যাত্রীদের জিম্মি করে তিনগুণ ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকায় ট্রাভেল ও ট্যুরিজম খাতে প্রতিদিন একশ’ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।
বায়রার যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান করোনা পরবর্তী জনশক্তি রফতানি খাতে বড় ধরনের ধাক্কা আসার ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, করোনা মহামারির টিকা বের না হওয়া পর্যন্ত কোনো সোর্স কান্ট্রি বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেবে না। সূত্র : ইনকিলাব

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।