শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০১:২৭ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
টঙ্গী রাজস্ব সার্কেলের এসি ল্যান্ড অফিস : ঘুষের রমরমা বাণিজ্য: নাটেরগুরু সার্ভেয়ার সাত্তার : এসি ঘুষের বিষয়টি অস্বীকার করলেন

একুশে বার্তা ডেক্স : ঘুষ-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে গাজীপুরের টঙ্গী রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি ল্যান্ড অফিস। এখানে ঘুষ স্বাভাবিক ঘটনা। এ অফিসে নথি এলে তা আটকে মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি করা হয়। চাহিদা অনুযায়ী ঘুষ না পেলেই বাতিল হয়ে যায় নথি।

অনুসন্ধানে বাতিল হয়েছে অথবা আটকে আছে এমন অন্তত ২০টি নথির খোঁজ মিলেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই নথি আটকে মোটা অঙ্কের ঘুষ বাণিজ্য হয়েছে। আর এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়ে সার্ভেয়ার আবদুস সাত্তারের নাম এসেছে। ঘুষ-বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রক হিসেবে এসি ল্যান্ড অফিসের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী জারিকারক সিরাজুল ইসলাম ও অফিস সহকারী নজরুল ইসলামের নামও এসেছে।

সিরাজ গাজীপুরে ‘জুয়াড়ি সিরাজ’ বলে পরিচিত। এসি ল্যান্ড শারমিন আরার নাম করেই নেয়া হয় ঘুষ। এসি ল্যান্ড অফিসের এ তুঘলকি কারবারে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এসি ল্যান্ড শারমিন আরার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত তিন দালাল সিরাজুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন এবং দেলোয়ার হোসেন সেবা প্রার্থীদের কথায় কথায় নথি আটকে দেয়ার হুমকি দেন।

তাদের মধ্যে দালাল সিরাজুল ইসলাম গাছা ভূমি অফিস নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি রেজিস্টার এন্ট্রি করেন। কাশিমপুর ভূমি অফিস নিয়ন্ত্রণ করেন দালাল আলমগীর হোসেন এবং টঙ্গী ভূমি অফিস নিয়ন্ত্রণ করেন দালাল দেলোয়ার হোসেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে এসি ল্যান্ড শারমিন আরার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়েও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে তিনি গত  মঙ্গলবার জানান, তিনি কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভূমি অফিসের এক দালাল যুগান্তরকে বলেন, কাশিমপুরের মাঈন উদ্দিন নামজারির আবেদন করেছিলেন কয়েক মাস আগে। আবেদনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্ট তিনি সংযুক্ত করেন। তারপরও সার্ভেয়ার আবদুস সাত্তার তার কাছে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। তিনি ঘুষ দেননি। এ কারণে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস না থাকার কথা জানিয়ে তার নথিটি বাতিল করে দেয়া হয়। এরপর তিনি নতুন করে আবেদন করে সার্ভেয়ার আবদুস সাত্তারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। আবদুস সাত্তার তাকে বলেছেন, এবার আর কোনো সমস্যা হবে না। আগে ঘুষ দিলে নথিটি বাতিল হতো না।

কয়েক মাস আগে কাশিমপুরের শৈলডুবী গ্রামের সাইফুল ইসলামের নামজারির প্রস্তাব কাশিমপুর ভূমি অফিস থেকে এসি ল্যান্ড অফিসে পাঠানো হয়। নথিটি এসি ল্যান্ড অফিসে পাঠানোর সময় প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্রের ফটোকপি দেয়া হয়। কিন্তু এসি ল্যান্ড অফিস পর্চা নেই উল্লেখ করে নামজারির আবেদনটি বাতিল করে দেয়। সাত্তারের চাহিদামতো ঘুষের টাকা না দেয়ায় পর্চা নেই উল্লেখ করে নথিটি বাতিল করা হয়।

কাশিমপুর ভূমি অফিস সূত্র জানায়, ওই এলাকার ছোট গোবিন্দপুরের বাকী বিল্লাহ নামে এক ব্যক্তি নামজারির আবেদন করেছিলেন। কাশিমপুর ভূমি অফিস থেকে তার নথিটি এসি ল্যান্ড অফিসে পাঠানো হলে সার্ভেয়ার আবদুস সাত্তারের টেবিলে গিয়ে আটকে যায়। সাত্তার তার কাছে ঘুষ দাবি করেন। ঘুষ না দেয়ায় নথিটি অনেকদিন আটকে ছিল। পরে সার্ভেয়ার নথিটি বাতিল করে দেয়ার হুমকি দিলে বাকী বিল্লাহ তাকে ১৫ হাজার টাকা দেন। পরে নামজারি করে দেয়া হয়।

জানা যায়, ছোট গোবিন্দপুর মৌজার এস দাগ নম্বর ৫৫ এবং আরএস দাগ নম্বর ১৭৩/৭৪; এসএ দাগ নম্বর ২৭৫ এবং আরএস দাগ নম্বর ৫৪৩ জমির নামজারির আবেদনের নথি দুটি সার্ভেয়ার আবদুস সাত্তারের টেবিলে আটকে আছে।

আবেদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত এক দালাল জানান, আবদুস সাত্তার ওই নথি দুটি ছাড়তে এক লাখ করে ঘুষ দাবি করেছেন। এছাড়া ছোট গোবিন্দপুরের এসএ দাগ নম্বর ৩২ এবং আরএস দাগ নম্বর ২৩, সারাব মৌজার এসএ ২৭১ এবং আরএস ৫৪৩ দাগ নম্বর জমির নামজারির আবেদনের নথিও সার্ভেয়ার আবদুস সাত্তারের টেবিলে আটকে আছে। আবেদনকারীদের তিনি বলেছেন, ঘুষ না দিলে নথি বাতিল করে দেয়া হবে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সার্ভেয়ার আবদুস সাত্তার  বলেন, ‘আমি কোনো ধরনের ঘুষ-দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নই। নথি আটকে রেখে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন।’

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।