সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ১২:৫৭ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
পাড় কেটেই পুকুর কাটার বিল নেয়া হয় : প্রধানমন্ত্রী

ডেক্স রিপোর্ট : ‍প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাকালেও উন্নয়নের মূল গতি যেন অব্যাহত থাকে সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতেও নেয়া হয়েছে নানা পরিকল্পনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আবারো সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, জীবন চলতে থাকবে, জীবন স্থবির থাকতে পারে না। তারপরও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধিটা একটু মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি। গত ২১ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা জানান। গণভবনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেকের সভায় প্রায় ৯ হাজার ৪৬০ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয় সম্বলিত ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার মধ্যেও উন্নয়ন কাজ চালিয়ে নিতে হবে। তিনি বলেন, করোনার কারণে ইতিমধ্যে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্যসহ অনেককে হারিয়েছি। দেশবাসীর কাছে এটুকু বলব, আসুন সবাই মিলে দোয়া করি, আল্লাহ যেন এ মহামারী থেকে আমাদের মুক্তি দেন। এটা শুধু বাংলাদেশ বলে না, বিশ্বব্যাপী সমস্যা। মানুষ যেন করোনা থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে, সেটাই আমরা চাই। এছাড়া এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস সংক্রমণে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের জন্য শোকও প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের কাছে অভিযোগ আছে পাড় কেটেই পুকুর কাটার বিল নেওয়া হয়। পুকুরের চারপাশ পরিষ্কার করেই বিল নেওয়া হয়। এ সময় বিষয়গুলো ভালোভাবে নজরদারির নির্দেশ দেন তিনি।
জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ আছে পাড় কেটেই পুকুর কাটার বিল নেওয়া হয়। পুকুরের গভীরতা খনন না করে চারপাশ পরিষ্কার করেই বিল নেওয়া হয়। এর আগে একনেক সভায় এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমের গতি বাড়াতে ‘পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-৩’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২৮০ এমপির জন্য বরাদ্দ ৬৪৭৭ কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন দেওয়া হয়।

সভায় অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্প; পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘মনু নদীর ভাঙন হতে মৌলভীবাজার জেলার সদর, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলা রক্ষা’ প্রকল্প; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের তিনটি প্রকল্প ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-৩’ প্রকল্প, ‘বৃহত্তর পটুয়াখালী জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলা) (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্প ও ‘হাওড় অঞ্চলে টেকসই পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও হাইজিন ব্যবস্থার উন্নয়ন’ প্রকল্প।

এছাড়াও, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘জামালপুর জেলা কারাগার পুননির্মাণ’ প্রকল্প; সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প ‘গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথমান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (চট্টগ্রাম জোন) (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প ও ‘টেকেরহাট- গোপালগঞ্জ (হরিদাসপুর)-মোল্লাহাট (ঘোনাপাড়া) আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্প; রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের ১০০টি মিটার গেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুনর্বাসন (২য় পর্যায়)’ প্রকল্প এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘বিএএফও বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণ, যশোর (৩য় সংশোধিত)’ প্রকল্পটি ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ বৃদ্ধির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভার কার্যক্রমে অংশ নেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি; শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক; মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন ও ভ‚মিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী প্রমুখ।

সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান অনলাইন সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, সভায় উপস্থাপিত ১০টি প্রকল্পের মধ্যে একটি প্রকল্প ব্যয়বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ বৃদ্ধির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট প্রকল্পের মোট ব্যয় প্রায় ৯ হাজার ৪৬০ কোটি ৯ লাখ টাকা। সবগুলো প্রকল্প সরকারি অর্থে বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ‘পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-৩’ অনুমোদিত হয়েছে। এই প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। প্রায় ৬ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকার এই প্রকল্পের অধীনে প্রত্যেক সংসদ সদস্যকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী পাঁচ বছরে ২০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হবে। এমপিরা তৃতীয়বারের মতো বরাদ্দ পাচ্ছেন। প্রকল্পের আওতায় নতুন করে ৩০৫ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক, ৩৬০ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক উন্নয়ন, ৫ হাজার ৭৫ কিলোমিটার গ্রাম সড়ক উন্নয়ন, এক হাজার ৯০ কিলামিটার গ্রামীণ সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ, ৭ হাজার ৯৯২ মিটার গ্রামীণ সড়কে (১০০ মিটারের কম দৈর্ঘ্যরে) সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। তবে একবারে নয়, চার ভাগে প্রতিবছর পাঁচ কোটি টাকা করে এই টাকা বরাদ্দ পাবেন তারা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে প্রত্যন্ত পল্লী অঞ্চলেও আধুনিক নগর সুবিধা স¤প্রসারিত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।