সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ১২:৪২ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
হজযাত্রীদের সেবায় সৌদি যাচ্ছে ৩৬২ জনের বিশাল বহর, তদবির বাণিজ্য চলছে, এবারও কি শালা-দুলাভাই যাচ্ছেন, সিএএবির পরিচালক এইচআরও কি এবারও যাচ্ছেন?

একুশে বার্তা রিপোর্ট : চলতি বছর হজযাত্রীদের সেবায় সৌদি আরব পাঠানো হচ্ছে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৩৬২ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর এক বিশাল বহর। গত বছর এ সংখ্যা আড়াইশর কম হলেও এবার তিন শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। তাদের জন্য বিমানের টিকি চেয়ে ইতোমধ্যে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে চিঠি দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। চিকিৎসক ছাড়া বাকিদের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকার পরও প্রতিবছরই থাকা-খাওয়াসহ সরকারি খরচে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশাল বহর সৌদি পাঠানো হয়। প্রতিবছরই হাজিদের সেবা না দিয়ে অন্যত্র ঘুরে বেড়ানোসহ নানা অভিযোগ উঠে এই দলের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পিওন, মালী থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা ও চিকিৎসকদের সমন্বয়ে এই সেবা দল গঠন করা নিয়েও রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ।

এতে সরকারের খরচ হবে কোটি কোটি টাকা, হজ্ব যাত্রীদের সেবার নামে  এই বিশাল সেবাদলের সদস্যদের কি প্রয়োজন- এটা অনেককেই ভাবিয়ে তুলছে। কারণ এতে করে সরকারের অর্থ ব্যয় ছাড়া আর কিছু না, অন্য দিকে লাভবান হচ্ছে এর সাথে সংশ্লিষ্ট কতিপয় কর্মকর্তা- যারা সেবদলের তালিকা করে থাকেন, সেবাদলের সদস্যরাও ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হবেন, হাজিদের সেবায় কোন কাজে আসবে না। শুধু শুধু সরকারেরর খরচ হবে কোটি কোটি টাকা। শুধু চিকিৎসক ছাড়া সেবাদলে অন্যদের অর্ন্তভুক্তি বাতিল করা উচিত বলে অনেকে মনে করেন।

প্রশ্ন ওঠেছে এবারও কি প্রতিবছরের ন্যায় আশকোনা হজ্ব অফিসে কর্মরত শালা-দুলাভাই যাচ্ছেন? সিভিল এভিয়েশনের পরিচালক এইচআরও কি এবার সেবা দলে অর্ন্তভুক্তি হচ্ছেন, তাহলে তো ওই কর্মকর্তার জন্য পোয়াবারো , হজ্বও করবেন আবার সরকারি  কয়েক লাখ  টাকাও পাবেন । এবারের সেবাদলে গণমাধ্যম কর্মীরাও কি অর্ন্তভুক্তি হতে যাচ্ছেন? আর এ সবের কলকাঠি নাড়ছেন পরিচালক হজ্ব এবং হজ্ব অফিসার আব্দুল মালেক।

অন্যদিকে আগামী ১৬ জুন পবিত্র হজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখনো হাজিদের বাড়িভাড়াসহ অনেক আনুষ্ঠানিকতাই বাকি রয়েছে। প্রতিবছরই দেরিতে এই উদ্যোগ নেওয়ায় সুবিধাজনক জায়গায় বাড়ি না পাওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ জন্য অতিরিক্ত অর্থও গুনতে হয়। এবার এখন পর্যন্ত বাড়িভাড়া চূড়ান্ত করতে না পারায় পরস্পরের বিরুদ্ধে দোষারোপ চলছে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও এজেন্সির মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-হাবের মধ্যে। এ জন্য হাব ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করেছে। মন্ত্রণালয় বলছে, তারা সব কিছু সমাধান করার চেষ্টা করছে।

জানা গেছে, এবার ৩৬২ সদস্যের হজ সেবা দলের মধ্যে চিকিৎসক রয়েছেন ১৭৯ জন। আবার এই মেডিক্যাল টিম গঠন নিয়েও নানা কথা রয়েছে। মেডিক্যাল টিমে যোগ্য চিকিৎসকদের বদলে তদবিরই প্রাধান্য পেয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। চিকিৎসক ছাড়া হজ সেবা দলের বাকি ১৮৩ জন সাধারণ সদস্য। তাদের নেওয়া হয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে। হজযাত্রীদের সেবার নামে বিশাল বহর পাঠানো হয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের থেকেও। প্রতিবছর সরকারি খরচে বিমানের প্রায় ২০০ কমকর্তা-কর্মচারীকেও হজে পাঠানো হয়। এর ফলে সরকারকে খরচ করতে হয় বিপুল অর্থ।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে,হজযাত্রীদের সেবা দলের তালিকাভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বিমানের টিকিট ক্রয় করতে ধর্ম মন্ত্রণালয় গত ১৭ এপ্রিল বেসমারিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, হজ টিম সদস্যদের জন্য বিমান টিকিট বরাদ্দ করতে হবে। এতে সৌদি আরবে সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনা ও হজযাত্রীদের সেবার উদ্দেশ্যে ২০২৪ সালে গঠিত বিভিন্ন হজ টিমের সদস্যদের জন্য কয়েকটি তারিখে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে টিকিট ইস্যু করতে বলা হয়। তাতে বিভিন্ন তারিখে মোট ৩৬২টি টিকিট চাওয়া হয়েছে। তাদের জন্য ২৮ এপ্রিল থেকে ১০ জুন পর্যন্ত ঢাকা থেকে জেদ্দা ও ৫ জুন থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত জেদ্দা থেকে ঢাকায় আসার জন্য বিজনেস ক্লাস, ইকোনোমি ক্লাসের টিকিট প্রদান করার অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মুহা. আবু তাহির।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, প্রতিবছরই হজের কাজ তদারকির নামে অনেকটা গণহারে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সৌদি আরব যাচ্ছেন। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তবে গত বছরের চেয়ে এবারের সংখ্যা বেশি। সৌদি আরব যেতে কার নাম ঢুকানো যাবে তা নিয়ে প্রতিযোগিতা ও তদবির হয়েছে। তালিকায় যাদের নাম আছে, তাদের মধ্যে বেশির ভাগই বেশ কয়েকবার সৌদি আরব গেছেন। হাজিদের দেখভাল করার জন্য এত কর্মকর্তা-কর্মচারীর যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। সরকারের টাকা এভাবেই গচ্ছা যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, হজের নিবন্ধন শেষে চলতি বছর কোটা খালি রয়েছে ৩৮ হাজার ৬৩৫ জনের। বাংলাদেশের জন্য এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮টি কোটা নির্ধারণ করে দেয় সৌদি আরব। এর মধ্যে সরকারিভাবে হজে যেতে নিবন্ধন করেছেন ৯ হাজার ৬৬৮ জন। বেসরকারিভাবে নিবন্ধন করেছেন ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন। সব মিলিয়ে মোট নিবন্ধন করেছেন ৮৮ হাজার ৫৬৩ জন।

জানা গেছে, হজের খরচ সাধারণ হাজিদের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় গত দুই বছর ধরে কোটা ফেরত যাচ্ছে। ২০২৩ সালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজ ৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা নির্ধারণ হয়। গতবারের তুলনায় এবার প্যাকেজের দাম ৯২ হাজার ৪৫০ টাকা কমানো হয়েছে। এবার হজের নিবন্ধন শুরু হয় ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর, যা ১০ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রত্যাশিত সাড়া না মেলায় চার দফা সময় বাড়িয়ে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিবন্ধনের সুযোগ দেয় ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এতেও কাক্সিক্ষত সাড়া মেলেনি।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।