শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০২:৩২ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
‘মেসিকে ছাড়াই’ জিতল আর্জেন্টিনা

খেলা ডেক্স : ‘মেসি একা কী করবে?’– শেষ কয়েক বছরে বার্সেলোনা হোক বা আর্জেন্টিনা, বড় ম্যাচে দলের ব্যর্থতার পর এমন কথা দেশীয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে ফিরেছে অসংখ্য, অগণিতবার; সেটা মেসিকে টিপ্পনী কেটে হোক কিংবা তার পক্ষ নিতে গিয়ে।

পোল্যান্ডের বিপক্ষেও আজ এমনই একটা পরিস্থিতির মুখে পড়ে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। শুরুর অর্ধে মেসি গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন, গোলে শট নিয়েছেন, কিন্তু সফল হননি; এমনকি নিজে পেনাল্টিও মিস করে বসেছেন। মেসি-ভক্ত হয়ে থাকলে আপনাকে তখন পুরোনো সেই সব দিনের স্মৃতি তাড়া করে ফেরাটা অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। কিন্তু আর্জেন্টিনা আজ আর পুরোনো দিনের পথে হাঁটেনি। হেঁটেছে নতুন এক পথে। জিতেছে ‘মেসিকে ছাড়াই’!

শিরোনাম, বা এ পর্যন্ত পড়ে ভুল বুঝবেন না যেন। লিওনেল মেসি ম্যাচে ছিলেন পুরো ৯০ মিনিটই। প্রথমার্ধের সেই পেনাল্টি মিসটা বাদ দিলে খেলেছেনও দুর্দান্তও। স্রেফ গোলটাই পাননি। তার আজকের ম্যাচের পরিসংখ্যানটা দেখুন। পুরো ম্যাচে শট নিয়েছেন ৭টি, যার ৪টি ছিল লক্ষ্যে, অন্তত দুটো দারুণ সেভ দিতে হয়েছে পোল্যান্ড গোলরক্ষক ভয়চেখ সজেসনিকে; দুটো শট গেছে লক্ষ্যের বাইরে, একটা শট হয়েছে ব্লক। গোল করা বাদ দিলেও খেলা গড়ে দেওয়ার দিক থেকেও মেসির তুলনা হয় না, হয়নি আজও। ৫টা কি পাস দিয়েছেন। লং বল বাড়িয়েছেন ৬টা, যার ৪টা সফল হয়েছে।

ছোটোখাটো একটা রেকর্ডও গড়ে ফেলেছেন। ফিফা বিশ্বকাপের বিভিন্ন খুঁটিনাটি তথ্য রাখা শুরু হয়েছে ১৯৬৬ বিশ্বকাপের পর থেকে; সেই থেকে এই পর্যন্ত ফুটবলের মহাযজ্ঞে ৫টি গোলের সুযোগ তৈরি করা আর ৫টি সফল ড্রিবল করা সবচেয়ে ‘বুড়ো’ খেলোয়াড় বনে গেছেন মেসি। ভেঙেছেন কার রেকর্ড? কার আবার! ডিয়েগো ম্যারাডোনার। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে গড়েছিলেন এই রেকর্ড। এমন পারফর্ম্যান্সের পর সোফাস্কোর মেসিকে ১০এর মধ্যে দিয়েছে ৮.২ রেটিং পয়েন্ট, পেনাল্টি মিস করার পরও!

বে এতসব রেকর্ড, রেটিং পয়েন্ট ইত্যাদি ইত্যাদি ফিকে হয়ে যেত, যদি না তার দল জয়টা পেত পোল্যান্ডের বিপক্ষে। সেখানে যা হয়েছে, সে কারণেই এত্তো এতো আলোচনা!

আর্জেন্টিনার দুটো গোলের ফিরিস্তি শুনুন আরেকবার। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ডান পাশ থেকে আক্রমণে উঠে নাহুয়েল মলিনা নিচু ক্রস দিলেন অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টারকে। তার বুদ্ধিদীপ্ত শট এনে দেয় আর্জেন্টিনার প্রথম গোলটা। ৬৭ মিনিটে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় গোলটা এলো নিখাদ তারুণ্যের যুগলবন্দিতে। এনজো ফের্নান্দেজ বলটা বাড়ালেন বক্সে থাকা ইউলিয়ান অ্যালভারেজকে, তার আগুনে এক শট আর্জেন্টিনাকে এনে দেয় ২-০ গোলের অগ্রগামিতা। লিওনেল স্ক্যালোনির শিষ্যরা জয়টা পায় সেই ২-০ গোলেই।

এই যে দুটো গোলের ফিরিস্তি শুনলেন (বা ‘পড়লেন’), এখানে মেসির নাম এসেছে ক’বার? উত্তরটা সহজ, একবারও নয়! মেসির গোল নেই, নিদেনপক্ষে একটা যোগানও নেই! গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এমন পারফর্ম যখনই করেছেন মেসি, দলের জয়টা খুব একটা দেখা হয়নি আর্জেন্টিনার। একেবারেই হয়নি, বললে ভুল হবে হয়তো। ২০২১ কোপা আমেরিকার ফাইনালেই তো পেয়েছিল! আজ যেমন পেল আবার।

আর্জেন্টিনার মেসি-নির্ভরতাটা নতুন কিছু নয়। ২০১৪ বিশ্বকাপের কথাই ধরুন। আর্জেন্টিনা গ্রুপ পর্ব আর নকআউট মিলিয়ে করেছিল আট গোল। তার কমপক্ষে ৭টাতেই ছিল মেসির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অবদান। বসনিয়া-হার্জেগোভিনা ম্যাচে সাদ কোলাসিনাচের আত্মঘাতী গোলটা এসেছিল মেসির ফ্রি কিক থেকে। কোয়ার্টার ফাইনালে গনজালো হিগুয়াইনের গোলটার যোগান আনহেল ডি মারিয়ার হলেও মুভটা শুরু করেছিলেন মেসিই! নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে গোল-অ্যাসিস্ট পাননি, খেলাটা গড়িয়েছিল টাইব্রেকারে, জার্মানির বিপক্ষে তো দল হেরেই বসেছিল! আর্জেন্টিনা বা বার্সেলোনার এমন মেসি নির্ভরতার কারণে স্প্যানিশ অভিধানে একটা নতুন শব্দই যোগ হয়ে গেছে ‘মেসিডিপেন্ডেন্সিয়া’ নামে!

এই আর্জেন্টিনা সেই ‘মেসিডিপেন্ডেন্সিয়া’ থেকে বেরিয়ে এসেছে, বিশ্বকাপের আগে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল বেশ। হবেই বা না কেন? চলতি শতাব্দিতে দলের সবচেয়ে বড় সাফল্যটাই যে এসেছে এই মেসিডিপেন্ডেন্সিয়া থেকে বেরিয়ে!

কিন্তু বিশ্বকাপ আসতেই যেন সেই পুরোনো দিনের গল্পেরই পুনর্মঞ্চায়ন ঘটছিল। প্রথম ম্যাচে গোল করলেন, তবু হারল দল; দ্বিতীয় ম্যাচে তিনি গোল করলেন, করালেন, দলকেও জেতালেন। তখন ‘যা করার মেসিই করেন’ শীর্ষক আলোচনা ফিরে ফিরে আসছিল যেন। লিওনেল স্ক্যালোনির দল তার জবাবই যেন দিলো আজ। দলের অধিনায়ক লিওনেল মেসি যে তাতে খুশিই হবেন, তা আর বলতে!

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।