বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৫:৩৭ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকাকে ‘ঘিরে ফেলার’ পরিকল্পনা আওয়ামী লীগের

ডেক্স রিপোর্ট : আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে রাজধানী ঢাকাকে ‘অবরুদ্ধ’ করে ফেলার পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল আওয়ামী লীগের। গণসমাবেশের স্থান নিয়ে বিএনপি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রশি টানাটানির মধ্যে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময়কে এগিয়ে আনা হয়েছে। ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন শেষ হওয়ার এক দিনের মাথায় গতকাল বুধবার থেকেই রাজধানীজুড়ে সতর্ক অবস্থান নিতে শুরু করেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী-সমর্থকরা। গণসমাবেশের আগে-পরে পাল্টা সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে রাজপথ নিজেদের দখলে নেওয়ার পরিকল্পনাও চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীনরা। দলের নেতারা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নেতাকর্মী দিয়েও ঢাকাকে চারদিক দিয়ে ‘ঘিরে ফেলার’ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপির গণসমাবেশের আগের দিন শুক্রবার থেকে রাজধানীজুড়ে নেতাকর্মীর এমন সতর্ক অবস্থান নেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু গণসমাবেশ ও এর স্থান নির্ধারণকে ঘিরে বিএনপির অনড় ও মারমুখী অবস্থান সরকারসমর্থক নেতাকর্মী ও জনগণকে আরও শঙ্কিত করেছে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে বুধবার থেকেই নেতাকর্মীকে সব জায়গায় সতর্ক পাহারায় থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। বিএনপি-জামায়াতের ‘সম্ভাব্য নৈরাজ্য’ ঠেকাতে পাড়া-মহল্লা, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় জেলায় পাহারা বসানোর কথা বলেছেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের এমন নির্দেশনার পর গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সতর্ক পাহারা বসাতে শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা। মিছিল ও স্লোগান দিয়ে রাস্তার মোড়ে মোড়ে নেতাকর্মীকে মহড়া দিতেও দেখা যাচ্ছে। বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশ-বিএনপির রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর থেকে এই পাহারা জোরদার করা হয়।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নয়াপল্টন থেকে মতিঝিল এলাকার মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও অবস্থান নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীর একটি দল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে। মিছিল দেখা গেছে ধানমন্ডি রাসেল স্কয়ার, কল্যাণপুর, পাইকপাড়া, কলাবাগান, ভূতের গলি এবং হাতিরপুলসহ অন্য এলাকায়ও। দুপুরে কল্যাণপুর এলাকায় যুবলীগ নেতাকর্মীকে পিকআপে চড়ে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে ঘুরতে দেখা গেছে। সন্ধ্যার পর পাহারা আরও বেড়ে যায়। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এটি আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগ নেতারা।

সরকারি দলের নেতারা বলছেন, গণসমাবেশের আগের দিন শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থান থাকবে।
নেতারা বলছেন, বিএনপির গণসমাবেশকে ঘিরে পরিবহন ধর্মঘট না ডাকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার সুযোগ নিয়ে ঢাকার বাইরে থেকেও বিএনপি সমর্থকরা দলে দলে যোগ দিতে আসতে পারেন। তাদের মাধ্যমে নাশকতা ও সহিংসতা উস্কে দেওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। এ অবস্থায় বিএনপি নেতাকর্মীর ‘প্রবেশ ঠেকাতে’ রাজধানীর সবগুলো প্রবেশপথে অবস্থান নেবেন নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে মহানগর উত্তরের টঙ্গী, আশুলিয়া ও গাবতলী এবং মহানগর দক্ষিণের বাবুবাজার-গুলিস্তান, সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী, মহাখালী ও সদরঘাটসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে অবস্থান নেবেন মহানগর নেতাকর্মীরা। এর মধ্য দিয়ে ঢাকাকে অবরুদ্ধ করার পাশাপাশি চারদিক থেকে ঘিরে রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, মহানগর উত্তরের অধীন ২৬টি থানা, ৬৪টি ওয়ার্ড এবং একটি ইউনিয়নের সবগুলোতেই নেতাকর্মীর পাহারা বসানোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে নিজ নিজ থানা ও ওয়ার্ড সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে অবস্থান নেবেন নেতাকর্মীরা। দলের সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরাও একই অবস্থানে থাকবেন। ওয়ার্ড ও থানাওয়ারি অবস্থান তদারক করতে মহানগর উত্তরের ৭৫ জন নেতাকে ৭৫টি এলাকা ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।
থাকছে সমাবেশের কর্মসূচিও : ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ শুক্রবার বিকেলে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে ‘শান্তি সমাবেশ’ করবে। এই সমাবেশ থেকে নেতাকর্মীর একটি অংশকে বিএনপির গণসমাবেশের দিন শনিবার পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ এলাকায় রেখে দেওয়া হবে। তারা বিএনপির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে পরিস্থিতি অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবেন। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ শুক্রবার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিক্ষোভ মিছিল করবে। এ ছাড়া ১০ ডিসেম্বর ঢাকার প্রবেশমুখ সাভারের রেডিও কলোনি মাঠে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে।

আস্থা পাচ্ছে না আওয়ামী লীগ :গণসমাবেশ সুষ্ঠুভাবে আয়োজনে ‘ছাড়’ দিয়েও বিএনপির প্রতি আস্থা পাচ্ছেন না ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা। বিশেষ করে গণসমাবেশের স্থান নিয়ে বিএনপির রহস্যজনক ও ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান এবং সর্বোপরি বুধবার পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীর রক্তক্ষয়ী সংঘাতে জড়ানোর বিষয়টি তাদের সন্দেহ-সংশয়কে আরও জোরালো করেছে।

দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, গণসমাবেশের নামে বিএনপি ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে বড় ধরনের নাশকতা সৃষ্টি করতে চাইছে বলে তাদের মনে হচ্ছে। সারাদেশ থেকে নেতাকর্মী জমায়েত করে গণসমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণার মাধ্যমে ঢাকায় ‘লাগাতার অবস্থান’ নিতেও পারে তারা। আবার গণসমাবেশ থেকে বিএনপি ঘোষিত কর্মসূচিতে ভবিষ্যতে তাদের মিত্র দলগুলোকেও শরিক করা হতে পারে। অর্থাৎ সরকারবিরোধী বৃহত্তর যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে বিএনপি এগোচ্ছে। ঢাকায় সফলভাবে গণসমাবেশ করতে পারলে সেটা ত্বরান্বিত হবে। অন্যদিকে সমাবেশ সফল না হলে অন্য বিরোধী দলগুলো বিএনপির পক্ষে মাঠে নামার বিষয়ে নতুন করে ভাববে। এসব নানামুখী হিসাব-নিকাশ থেকেই গণসমাবেশের আগে-পরে গোটা রাজধানীতে সরকারসমর্থক নেতাকর্মীকে সতর্ক পাহরা রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।সমকাল

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।