বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০১:৪১ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
‘রূপবান’ কন্যা সুজাতার কথা

বিনোদন ডেক্স : চলচ্চিত্রের সোনালি সময়ের তারকা সুজাতা। রুপালি পর্দার প্রথম ‘রূপবান’ তিনি। ১৯৬৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘রূপবান’ চলচ্চিত্রটি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। এতে ১২ বছর বয়সী নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেন তন্দ্রা মজুমদার নামক এক কিশোরী। পরিচালক সালাহউদ্দিন এই তন্দ্রা মজুমদারের নাম রাখেন সুজাতা। আজো যিনি ‘রূপবান’ হয়েই আছেন দর্শক হৃদয়ে।

তার লম্বা ক্যারিয়ারের ঝুলিতে আরো আছে অনেক স্মরণীয় চরিত্র। ‘রূপবান’, ‘এতটুকু আশা’, ‘গাজী-কালু-চম্পাবতী’, ‘রাজাসন্ন্যাসী’, ‘বড় বউ’, ‘১৩নং ফেকু ওস্তাগার লেন’, ‘কাঞ্চন মালা’, ‘জরিনা সুন্দরী, ‘নাগিনীর প্রেম’, ‘অনেক প্রেম অনেক জ্বালা’, ‘অবুঝ মন’, ‘টাকার খেলা’, ‘প্রতিনিধি’, ‘বদলা’, ‘আলোর মিছিল’, ‘লালন শাহ’, ‘ভেলুয়া সুন্দরী’, ‘বেঈমান’, ‘আপনজন’, ‘মোমের আলো’, ‘মায়ার সংসার’, ‘আদর্শ ছাপাখানা’সহ অসংখ্য সুপারহিট ছবি তিনি দর্শকদের উপহার দিয়েছেন। বর্তমান সময়টা কেমন কাটছে সুজাতার জানতে চাইলে তিনি  বলেন, বর্তমান সময়ে বেশকিছু টিভি সিরিয়ালে কাজ করছি। হাসান জাহাঙ্গীর পরিচালিত ‘রঙ্গের দুনিয়া’ ধারাবাহিক নাটকটি প্রচারের পর কয়েকটি ধারাবাহিক নাটকে কাজ করার জন্য প্রস্তাব আসে। তবে সব কাজ করা হয়নি। এরমধ্য থেকে ‘বয়রা পরিবার’, ‘লাল পাহাড়’, ‘সাক্ষী দুর্বল’, ‘পালকী’ নামে ধারাবাহিকগুলোতে কাজ করেছি। সামনে নতুন একটি ছবিতে কাজ করার বিষয়ে কথা হচ্ছে। একটা সময় গেছে যখন প্রতিদিনই শুটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়েছিল। কিন্তু এখন সেই বয়সও নেই, সময়ও নেই। তবে কাজ করার ইচ্ছেটা আগের মতোই আছে আমার। ভালো গল্পের ছবিতে এখনো কাজ করার ইচ্ছে আছে। বড় পর্দায় কাজে আসার বিষয়ে তিনি আরো বলেন, ‘রূপবান’খ্যাত সালাহউদ্দিন সাহেব তার ‘ধারাপাত’ সিনেমার জন্য একটি নতুন মুখ খুঁজছিলেন। আমজাদ ভাই তখন তার সহকারী পরিচালক ছিলেন। যত দূর মনে পড়ে, তখনই আমি আমজাদ ভাই পরিচালিত ‘মায়ামৃগ’ নাটকে নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করছিলাম। তিনি আমার কথা সালাহউদ্দিন সাহেবকে বলেন। ‘ধারাপাত’ ছবির পরিচালক নাটকটির মঞ্চায়নের দিন আমার অভিনয় দেখতে এলেন। আমাকে দেখে তার পছন্দ হলো। অভিনয়ও ভালো লাগল। এর পরই তার ছবিতে নায়িকা চরিত্রে মনোনীত করেন। তবে বড় পর্দায় একটি নাচের দৃশ্যের মাধ্যমে আমার প্রথম আগমন। সেই ছবিটির নাম ছিল ‘দুই দিগন্ত’। কিন্তু  প্রেক্ষাগৃহে প্রথম মুক্তি পায় ‘ধারাপাত’ নামের ছবিটি। এই আমার পথচলা শুরু হলো। তবে সালাহউদ্দিন সাহেবের ‘রূপবান’ ছবিটি আজও ইতিহাস হয়ে আছে। ১৯৬৫ সালে তিনি যে ‘রূপবান’ তৈরি করলেন, সেটির পেছনেও তার দেশপ্রেমই প্রধান ছিল বলে জানান সুজাতা। কারণ তখন পুরো পূর্ব পাকিস্তানেই উর্দু ছবি বানানোর হিড়িক চলছিল। এই বাংলার মানুষকে বাংলা ছবি দেখতে আগ্রহী করে তুলতে তিনি একটি সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। উর্দু ছবিকে সরিয়ে আবার বাংলা ছবিকে সবার মধ্যে ফিরিয়ে আনার জন্য দেশের যাত্রা-লোকগাথা ‘রূপবান’কে নিয়ে দর্শকদের সামনে হাজির হন। এরপরের ইতিহাসটা সবারই জানা। ‘রূপবান’খ্যাত নায়িকা সুজাতার অবসর কিভাবে কাটে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনতো অনেকটা সময় অবসরেই কাটে। আমার একমাত্র ছেলে ফয়সাল আজিমের দুই ছেলে অর্থাৎ দুই নাতি ফারদিন আজিম ও আবিয়াদ আজিমের সঙ্গেই অবসর সময় কাটে। মাঝে এক যুগেরও বেশি সময় অভিনয় থেকে দূরে ছিলেন সুজাতা। তবে মনের টানে আবারো কাজে ফিরেছেন তিনি। ১৯৭৭ সালে সুজাতা সর্বশেষ নায়িকা হিসেবে রহিম নেওয়াজ পরিচালিত ‘রাতের কলি’ ছবিতে অভিনয় করেন। সবশেষে এ অভিনেত্রী বলেন, অভিনয়কে ভালোবাসি বলেই এখনো অভিনয় করে যাচ্ছি। কাজের মধ্য দিয়ে সময়টা কাটলে ভালো লাগে। তাই পুরানো বা নতুন যে কোনো পরিচালকের ভালো ছবিতে ডাক পেলে অবশ্যই কাজ করব। তবে ভালো কাহিনী নিয়ে করা ছবির সংখ্যাটা আমাদের এখন কমে গেছে। সেই দিকে আমাদের বেশি নজর দেয়া প্রয়োজন।

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।