সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:২০ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
যে কারণে ডিসি সাইদুলকে প্রিভেনটিভ থেকে সরিয়ে দেয়া হলো : ১নং ডেলিভারি গেটে ২০ ব্যবসায়ি সিন্ডিকেট সক্রিয়: ডিসির নেতৃত্বে কুরিয়ারে শৃংখলা ফিরে আসছে, রাজস্ব আদায় প্রতিদিন কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা কাস্টমস হাউজের কুরিয়ার শুল্কায়নে বিশৃংখল অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে শৃংখলা ফিরে আসছে। রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। খোজখবর নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন কুরিয়ারে রাজস্ব আদায় হচ্ছে প্রায় কোটি টাকা। পণ্য ডেলিভারিতে ব্যবসায়ীদের হয়রানির লাঘব হয়েছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে চৌকস কাস্টমস কর্মকর্তা, যিনি চোরাচালান প্রতিরোধের টিম লিডার থাকাকালে বাঘে-মহিষে একঘাটে জল খেয়েছে- সেই চোরাচালানীদের আতংক ক্যাডার কর্মকর্তা ঢাকা কাস্টমস হাউজের উপ-কমিশনার সাইদুল ইসলাম। যার নাম শুনলে চোরা কারবারিরা আতকে ওঠে। তিনি প্রিভেনটিভে দায়িত্ব পালনের সময় শাহজালাল বিমানবন্দরে ৯ কেজি সোনার চালানটি জব্দ করতে সক্ষম হয়েছেন।
একাধিক সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপ কমিশনার সাইদুল ইসলাম প্রিভেনটিম লিডার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় সংঘবদ্ধ স্মাগলাররা বিমানবন্দর কেন্দ্রিক ও আমদানি শাখার ১ নং ডেলিভারি গেটে আতংক বিরাজ করতো। তার টিমে আরো দুজন অফিসারের সমন্বয়ে পরিচালিত অভিযানে এয়ারফ্রেইট আমদানি শাখার ১ নং ডেলিভারি গেটে টনকে টন আমদানিকৃত পণ্য স্টপ ডেলিভারি করে পরিক্ষা-নিরিক্ষার পর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতেন। সিএন্ডএফ সিনথিয়ার এক কলসালমেন্ট পন্য আটক করে ১৬ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেন। তিনি আমদানি শাখার ১নং ডেলিভারি গেটে দায়িত্ব পালনের সময় তার চোখ এড়িয়ে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানিকৃত পন্য ছাড়করন কখনই সম্ভব হতো না। আর শাহজালাল বিমানবন্দরে স্মাগলিং একদম শূন্যের কোটায় চলে এসেছিল।
আর এ জন্য ডিসি সাইদুল ইসলাম স্মাগলারদের চক্ষুশুলে পরিণত হন। চোরা কারবারি ব্যবসায়ীরা তদবির করে তাকে ঢাকা কাস্টমস হাউজের প্রিভেনটিভ টিমের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেন। আর এ খুশিতে চোরা কারবারী ব্যবসায়ীরা মনের আনন্দে গদ গদ হয়ে যান, মিষ্টি বিতরণ করে থাকেন বলে শোনা যায়। আর এতে মূখ্য ভ’মিকা পালন করে থাকে ট্যাক্স ফাকিসহ দুই নম্বরি পদ্বতিতে সিদ্ধহস্ত, যে ব্যবসায়ীর টনকে টন পন্য ডেলিভারির সময় প্রিভেনটিভ ও শুল্ক গোয়েন্দা বার বার পন্য স্টপ ডেলিভারি করে পরিক্ষা-নীরিক্ষা করে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে- সেই ব্যবসায়ী গ্রুপসহ আমদানি শাখার প্রায় ২০ চোরা কারবারি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ডিসি সাইদুলকে প্রিভেনটিভ থেকে সরিয়ে দিয়ে ১ নং ডেলিভারি গেট দিয়ে দুই নম্বরি পদ্বতিতে চোর কারবারি ব্যবসা করছে, আর সরকার হারাচ্ছে প্রতিদিন প্রায় ১০ কোটি টাকার রাজস্ব। আমদানি শাখার ১নং ডেলিভারি গেট শতভাগ ট্যাক্সের আওতায় আনা গেলে সরকার প্রতিদিন এক ডেলিভারি গেট থেকেই ১০ কোটি টাকার রাজস্ব পেতো। কিন্ত সেটা সম্ভব হচ্ছে না উপ কমিশনার সাইদুল ইসলাম সরিয়ে দেবার পর থেকে। গেট কন্টক্টে ১ নং ডেলিভারি গেট দিয়ে চোরা কারবারিরা তাদের ব্যবসা জমজমাটভাবে করে যাচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থা এ ব্যাপারে নজরদারি করছে। কিন্ত সরষায় ভুত থাকলে যা হয়-তাই এখানে হচ্ছে। ডিসি এয়ারফ্রেইটের নজরদারি এখানে শানিত করা দরকার বলে অনেকে মনে করেন।
সূত্র জানায়, ডিসি সাইদুলকে প্রিভেনটিভ থেকে সরিয়ে আমদানি শাখার কুরিয়ার শুল্কায়নে ডিসির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ যেন বৃহৎ এক কর্মযঙ্ঞ থেকে একটা গন্ডিতে দায়িত্ব দেয়া হলো। এতে ডিসি সাইদুল কিছুটা মনোক্ষুন্ন হলেও দমে যাননি। তিনি অনেকটা চ্যালেন্ঞ হিসেবেই কুরিয়ারে দায়িত্ব বুঝে নেন। তিনি কুরিয়ারে দায়িত্ব নেবার পর থেকে বিশৃংখল অবস্থা থেকে কুরিয়ারে শৃংখলা ফিরে এসেছে, পন্য ডেলিভারি সহজিকরনে ব্যবসায়ীরা হয়রানির হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন। পাশাপাশি রাজস্ব ধস নামা থেকে প্রতিদিন প্রায় ১ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ডিসি সাইদুল কুরিয়ারে দায়িত্ব নেয়ার পর চোরা কারবারিরা এক আওয়ামীলীগ নেতার পন্য পাচার করার সময় তা রুখে দিয়ে ৫ পাচারকারিকে পাকড়াও করতে সক্ষম হন। এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় ৫ পাচারকারির নামে মামলাও হয়েছে। এদের মধ্যে কুরিয়াওে ইতিপূর্বে ৬ কাস্টমস কর্মকর্তাকে মারধর করে কমপক্ষে ৩০ কোটি টাকার পন্য পাচার ঘটনার মামলার আসামি যুবলীগ নেতা পরিচয়ধারি শ্যামলের ছোট ভাই প্রিন্সের নামও রয়েছে এবং প্রিন্স এ মামরাও এফআইআরভুক্ত আসামি হিসাবে গ্রেফতার হয়ে জেল খেটে বেরিয়েছে।
বাশার সিন্ডিকেট সক্রীয় : কুরিয়ারে বাশার সিন্ডিকেট এখনও সক্রিয় রয়েছে। তার জন্য কুরিয়ারে শৃংখলায় ধস নামতে পারে। প্রতিদিন এই বাশার সিন্ডিকেট কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে দুই নম্বরি পদ্বতিতে পন্য পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে। টংগির বাশার নামে অধিক পরিচিতি বাশার সিন্ডিকেট পণ্য পাচার করে ইতিমধ্যেই বহু বিত্তবৈভবের মালিক বনে গেছেন বলে সূত্র জানায়। টংগি এলাকায় ৬ তলা বাড়িসহ রাজধানিতে একাধিক ফ্লাট, প্লট রয়েছে বাশারের। যা দুদক তদন্ত করলেই থলের বিড়াল বের হয়ে আসবে।

একজন সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী জানান, ডিসি সাইদুল ইসলাম কুরিয়ারে দায়িত্ব নেয়ার পর শৃংখলা ফিরে এসেছে, রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন ১ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
১ নং ডেলিভারি গেটে ২০ সিন্ডিকেট সক্রিয় : এয়ারফ্রেইট আমদানি শাখার ১ নং ডেলিভারি গেটে ২০ সদস্যের চোরা কারবারি সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। এই সিন্ডিকেট সদস্যরা মিথ্যা ঘোষণায় পন্য আমদানি করে বিভিন্ন সংস্থার কতিপয় কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার পন্য পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে। ইতিপূর্বে ডিসি সাইদুল এবং শুল্ক গোয়েন্দার নজরদারি থাকায় ২০ চোরা কারবারি সিন্ডিকেট নিষ্কৃয় থাকলেও আবার তারা মাথাচারা দিয়ে ওঠেছে। এই ২০ সিন্ডিকেট সদস্যের একজন হচ্ছেন আলোচিত নাম শামীম। বরিশালের সন্তান শামীশ প্রায় ১০-১৫ বছর যাবত ১ নং ডেলিভারি গেট দিয়ে ডোর টু ডোর পন্যের ডেলিভারির নামে ওজনে কারচুপি, মিথ্যা ঘোষনায় আমদানিকৃত পন্য ডেলিভারির নামে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাকি দিচ্ছে। তার সিন্ডিকেট বাহিনী পন্য ডেলিভারির পর বান্ডিল বান্ডিল টাকার প্যাকেট নিয়ে বিভিন্ন কর্মকর্তার রুমে প্রবেশ করছে বলেও গোয়েন্দারা নজরদারি করছে ও খতিয়ে দেখছে। ইতিমধ্যেই বরিশালের এই শামীম ওরফে পিচ্চি শামীম ২-৩টি সিএন্ডএফ লাইসেন্স করে দুই নম্বরি পদ্বতিতে পন্য ডেলিভারি করে আংগুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। রাজধানির গুলশানের মতো অভিজাত এলাকায় এই শামীম বাড়ি বানাচ্ছে বলে সূত্রে জানা গেছে। অথচ একজন সিএন্ডএফ ব্যবসায়ি এক কনসালটেন্ট পন্য ডেলিভারি দিলে সর্Ÿোচচ ২ হাজার টাকার কমিশন পাবার কথা। এতে করে গুলশানে বাড়ি করার কেউ স্বপ্ন দেখতে পারে না। অথচ ২-৩ সিএন্ডএফ লাইসেন্স দিয়ে দুই নম্বরি পদ্বতিতে পন্য ডেলিভারি দিয়ে আজ কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন এই শামীম। দুদক এ ব্যাপারে নজরদারি করছে বলে সূত্রে জানা গেছে।

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।