বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৫:২৫ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
স্টাম্প জালিয়াতির ঘটনা ধরলেন ঢাকা কাস্টমস হাউজ কমিশনার : ৩ ডিসির কোরাম : ডিসি আলিমের বিরুদ্ধে মামলা : গত বছর ৫শ’ কোটি টাকার রাজস্ব ধস

বিশেষ সংবাদদাতা : ঢাকা কাস্টমস হাউজে যোগদানের পর পরই ভয়াবহ স্টাম্প জালিয়াতির ঘটনা ধরে ফেললেন ঢাকা কাস্টমস হাউজ কমিশনার মো. আব্দুল মান্নান শিকদার। শুধু তাই নয়- সরকারের রাজস্ব আয়ের পথ পুন: উদ্বার করে দিলেন।কারন এই ভয়াবহ স্টাম্প জালিয়াতির মাধ্যমে সরকার প্রতিদিন মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বন্ঞিত হতো।
ঢাকা কাস্টমস হাউজ সূত্রে জানা গেছে, কমিশনার মান্নান শিকদার ঢাকা কাস্টমস হাউজে যোগদানের পর তার পিএকে নির্দেশ দেন ঢাকা কাস্টমস হাউজের এডজুডিকেশন( বিচারাদেশ) সংক্রান্ত আবেদন বা ফাইলে লাগানো স্টাম্প একনম্বর বা দুইনম্বর অর্থাৎ আসল-নকল পরীক্ষা করে যেন আমার দপ্তরে পাঠানো হয়। আর এ জন্য কমিশনার মহোদয় পিএসহ নি¤œ স্টাফদের বিশেষ একধরনের পদ্ধতি ও প্রশিক্ষণ শিখিয়ে দিলেন। পদ্ধতির মধ্যে বিশেষ একধরনের সার্চ লাইটের আলোতে স্টাম্প জাল কি আসল তা ধরা পড়ে। এ জন্য তিনি বিশেষ একধরনের লাইটিং পিএকে ব্যবস্থা করে দিলেন এবং তিনি শিখিয়ে দিলেন কিভাবে জাল স্টাম্প ধরবেন।তাছাড়া তিনি ঢাকা কাস্টমস হাউজে যোগদানের পর পরই বিভিন্ন দপ্তর ঘুরে ঘুরে দেখেন। একেক দিন বিভিন্ন ইউনিট পরিদর্শনে বের হন। এতে ঢাকা কাস্টমস হাউজে ও বিভিন্ন ইউনিটে জবাবদিহিতার বিষয়টি ওঠে আসছে। কিন্ত কর্মকর্তাদের ঘুষ নেয়া ঠেকাতে পারছেন না। কয়েকজন কর্মকর্তা ছাড়া বাকি সবাই ঘুষে সিদ্ধহস্ত। তিনি কি ঘুষের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করতে পারবেন?
স্টাম্প জালিয়াতির ব্যাপারে কমিশনারের পিএ নাজির জানান, স্যারের বরাবর এডজুডিকেশনের আবেদনে বা ফাইলে লাগানো স্টাম্পে বিশেষ লাইট ধরলে যেটাতে ‘জিওবি’ লেখা ভেসে ওঠে সেটা আসল স্টাম্প আর বিশেষ লাাইটের আলোতে যেটাতে ‘জিওবি’ ভেসে ওঠে না তা নকল স্টাম্প। এ ভাবেই প্রতিদিন শত শত এডজুডিকেশন সম্বািলত আবেদন পরীক্ষা করে স্যারের টেবিলে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এতে স্টাম্প জালিয়াতির ঘটনা ঢাকা কাস্টমস হাউজে কমে গেছে। আগে এই পদ্ধতি জানা ছিল না। ফলে আসল বা নকল স্টাম্প কোনটি জানা যেত না। বর্তমান কমিশনার স্যার আসল-–নকল স্টাম্প চেনার পদ্ধতি শিখিয়ে দেয়ার পর এখন আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে স্টাম্প সম্বলিত ফাইল স্যারের দপ্তরে পাঠাই। এর ফলে ঢাকা কাস্টমস হাউজ ঘিরে নকল স্টাম্প বিক্রেতারা সটকে পড়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, কমিশনার হিসেবে আব্দুল মান্নান শিকদার ঢাকা কাস্টমস হাউজে যোগদানের পরই বেশ কিছু সংস্কারমুলক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে রাজস্ব আদায় কিভাবে বৃদ্ধি করা যায়, কিভাবে টার্গেট পর্যন্ত পৌছা যায়। কারন গত কমিশনারের আমলে ৫শ’ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ে ধস নেমেছে, আর এতে গত অর্থবছরে ঢাকা কাস্টমস হাউজে রাজস্ব আদায় টার্গেট ফুলফিল হয়নি। কারন আমদানি শাখার ১ নং ডেলিভারি গেট, কুরিয়ার গেটে কন্টাক্টে পণ্য পাচার প্রবণতা ভয়াবহ আকার ধারন করেছিল। বর্তমানেও এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
৩ ডিসির কোরাম : ৩ ডিসি- ডিসি প্রিভেনটিভ, ডিসি কুরিয়ার, ডিসি কুরিয়ার এসেসমেন্ট। এই ৩ ডিসির কারনে ঢাকা কাস্টমস হাউজে রাজস্ব আদায়ে ধস নামতে পারে। ৩ ডিসি ব্যাচমেট, কোরাম করে ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিয়ে সরকারি রাজস্বের বারোটা বাজিয়ে নিজেরা আংগুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন। ডিসি প্রিভেনটিভ অথেলৈা চৌধুরি শুধু বসে বসে তার বখরা নিয়ে নিচ্ছেন, কোন উদ্ধার বা রিকভারি অভিযানে তার মনোনিবেশ নেই বললেই চলে। ডিসি কুরিয়ার প্রতিটি খাচা থেকে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে বখরা আদায় করে রাজস্ব আদায়ের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন। এই কুরিয়ারে আগে যেখানে প্রতিদিন ১ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হতো এখন সেখানে চার ভাগের এক ভাগ হয় কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এই কুরিয়ারের এেেসসমেন্টের দায়িত্বরত ডিসি আব্দুল হালিমও ডিসি সাইদুল ইসলামের ব্যাজমেট হওয়ার সুবাধে গলায় গলায় ভাব। সংঘবদ্ধ পাচারকারিরা কমার্শিয়াল ব্যবসার অন্তরালে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকর পণ্য বিনা রাজস্বে বা নামকাওয়াস্তে রাজস্বে বা মিস ডিক্লারেশনে, ওজন কারচুপি করে, কাস্টমস কর্মকর্তাদের সুবিধা দিয়ে শুল্ক কম নির্ধারন করিয়ে , সেসালের বস্তায় পণ্য ভরে, পাচওয়ার্ড জালিয়াতি করে, নিজেরা কাস্টমস অফিসার সেজে দুইনম্বরি ডকুমেন্ট তৈরি করে কাস্টমস কর্মকর্তাদের নামের সীলমেরে কোটি কোটি টাকার পণ্য ডেলিভারি করে নিয়ে যাচ্ছে- তদন্ত গোপন তদন্ত করলে বের হয়ে আসবে। ইতিপূর্বে পাচওয়ার্ড জালিয়াতি করে পণ্য ডেলিভারির ঘটনায় কুয়িারে কর্মরত হালিম নামের একজন রাজস্ব কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করা হয়। পাচওয়ার্ড কাস্টমসের নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়। কিন্ত ঘটনার কিছুদিন পরই আবার পাচওয়ার্ড নিয়ন্ত্রণ ব্যবসায়ীদের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো এই পাচওয়ার্ডের ব্যবহার করে সরকারের রাজস্ব আয়ের বারোটা বাজাচ্ছে।
১ নং ডেলিভারি গেটে ২০ সদস্যের সিন্ডিকেট এই চক্রের হোতা। ওরা গত ইদবাজারে গেট কন্ট্রাক্টে পণ্য ডেলিভারি নিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাকি দিয়েছে-যা তদন্তে বের হয়ে আসবে। এ ঘটার উদ্রেক ধরা পড়লে ডিসি পাহলোয়ানকে ডিসি ফ্রেইটের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। বর্তমান ডিসি খায়রুল বাশার চেষ্টা করছেন ফ্রেইটে শৃংখলা ফিরিয়ে এনে রাজস্ব কিভাবে বৃদ্ধি করা যায়।
ডিসি আলিমের বিরুদ্ধে মামলা : ঢাকা কাস্টমস হাউজে কর্মরত ডিসি আব্দুল আলিমের বিরুদ্ধে নারী নির্য়াতনের মামলা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে তিনি ( ডিসি) আলিম বর্তমানে জামিনে আছেন।
জানা যায়, বিয়ের ১ মাসের মধ্যেই নববিাহিতা স্ত্রী তার ঘুষ কেলেংকারির প্রতিবাদসহ, নির্যাতন, যৌতুক দাবি করায় তার সাথে নববিবাহিতা স্ত্রীর বনিবনা না হওয়ায় ডিসি আলিমের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন। মামলাটি তদন্ত করেন ডিএমপি উত্তর বিভাগ। মোখলেস নামের এক ব্যবসায়ীকে দিয়ে খোজখবর নিয়ে ডিসি আলিম আদালত থেকে জামিন নেন।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ডিসি আব্দুল আলিম বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে আমাকে ফাসিয়ে দিয়েছে।
বহিরাগত খেদাও : কমিশনার আব্দুল মান্নান শিকদার ঢাকা কাস্টমস হাউজ থেকে বহিরাগত খেদাও অভিযান শুরু করেছেন। কিছু বহিরাগত কাস্টমস ক্লাবের পরিচয়পত্র ব্যবহার করছে আর যারা ক্লাবের পরিচয়পত্র পায়নি তারা বাইরে ঘুরছে। তবে বহিরাগত খেদাও অভিযানটি মানবিক দিক বিবেচনা করা যেতে পারে বলে অনেকে মন্তব্য করেন। কারন ওরা কাস্টমস হাউজে দীর্ঘদিন কাস্টমস কর্মকর্তাদের ফুটফরমায়েশ করে তাদের অর্ডারলি হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। তাদের পুনর্বাসন করে তাড়িয়ে দিলে কারো বলার কিছু থাকবে না।

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।