সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২৩ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড : লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব ঘাটতি ২৩ হাজার কোটি টাকা : বছর শেষে ৩০ হাজার কোটির ঘরে নামতে পারে : হালখাতা করে রাজস্ব আদায় ৯শ’ কোটি টাকা

বাণিজ্য ডেক্স : চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ধস নেমেছে। অর্থবছরের নয় মাস শেষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাথমিক হিসাবে দেখা যাচ্ছে, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অন্তত ২৩ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি। গত জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে ১ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব। অর্থবছর শেষে এ ঘাটতির পরিমাণ আরো  বেড়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অবশ্য গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের চেয়ে গত ৯ মাসে রাজস্ব আদায় বেড়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ।

গত বাজেটে ৩৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি ধরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে দুই লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। আর এনবিআর বহির্ভূত রাজস্ব মিলিয়ে মোট রাজস্বের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদরা বরাবরই আদায়যোগ্য ও বাস্তবসম্মত রাজস্ব আয় ও ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পরামর্শ দিয়ে আসছেন। অর্থমন্ত্রীর এমন প্রস্তাবের পর, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, চলতি বছর রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যামাত্রার চেয়ে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হতে পারে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ৩০ শতাংশের উপরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাকে অবাস্তব ও অর্জনযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, আদায় সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২২ শতাংশ বাড়তে পারে। কিন্তু ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কার্যত অসম্ভব। ফলে অতীতের ন্যায় চলতি অর্থবছরেও শেষদিকে এসে ফের সংশোধন করে কমিয়ে আনতে হবে। তিনি বলেন, বাজেটে বড় লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বাহাবা আদায় করা গেলেও দীর্ঘমেয়াদে তা জনমনে গুরুত্ব হারাবে।

অর্থবছরের শেষ দিকে এসে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়াও মনে করেন, এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে না।  গত ১৬ এপ্রিল  সোমবার এনবিআরের আওতাধীন বৃহত্ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ-ভ্যাট) আয়োজিত রাজস্ব হালখাতার সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এ লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে ২৫ হাজার থেকে ৩০ কোটি টাকা কমিয়ে আনা হতে পারে।

এদিকে মাত্রাতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়ায় মাঠ পর্যায়ে কর কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের উপর হয়রানি বাড়িয়ে দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি খোদ ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এমন অভিযোগ তুলেছে। প্রাক বাজেট আলোচনায় এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, জনগণ যাতে বৃহত্ বাজেটের ভার সহ্য করতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বড় রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের উপর আইন ও বিধি-বিধানের অপপ্রয়োগ, জুলুম ও হয়রানি বাড়ে। এ সময় মাঠ পর্যায়ে কর বা ভ্যাট আদায়কারী কর্মকর্তাদের দ্বারা হয়রানির অভিযোগ তুলে ধরেন খাতভিত্তিক ব্যবসায়ীরাও।

এনবিআরের প্রাথমিক হিসাবে দেখা গেছে, জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে রাজস্বের তিনটি খাতের মধ্যে আয়কর আদায়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি অপেক্ষাকৃত বেশি। আলোচ্য সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয়কর আদায় কম হয়েছে ৯ হাজার ৪১১ কোটি টাকা। একই সময়ে ভ্যাট ও শুল্ক আদায় কম হয়েছে যথাক্রমে ৯ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা ও ৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা।

হালখাতায় আদায় প্রায় ৯শ’ কোটি টাকা : গত রোববার দেশব্যাপী আয়কর ও ভ্যাট অফিসগুলোতে আয়োজিত রাজস্ব হালখাতায় করদাতা ও ব্যবসায়ীরা বকেয়া করের প্রায় ৯শ’ কোটি টাকা পরিশোধ করেছেন বলে এনবিআর সূত্র জানিয়েছে।  এরমধ্যে উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে হালখাতা করে আদায় হয়েছে সাড়ে ৩ কোটি টাকা।

গত ১৬ এপ্রিল  এলটিইউ’র ওই অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, রাজস্ব হালখাতায় বকেয়া করের ৪০৩ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। ভ্যাট ও শুল্ক মিলিয়ে আরো প্রায় ৫শ’ কোটি টাকা আদায় হতে পারে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালিক। তিনি বলেন, রাজস্ব আদায়ে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়লে স্বচ্ছতা বাড়ার পাশাপাশি দুর্নীতি কমবে।

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।