সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০২ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
ভ্রান্তিবিলাস সাজে না দুর্বিপাকে …

আমীর খসরু : কোন বিষয় নিয়ে  ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণসহ আলাপ-আলোচনা করতে চাইলে আগের প্রশ্ন অমিমাংসিত রেখে সেটি করা উচিত নয়। আমিসহ অনেকের কাছে করোনা ও এ সম্পর্কিত সামান্য দু’একটি প্রশ্ন এমনও মিমাংসিত নয়; যে কারণে মনের মধ্যে ‘খটকা’ রয়ে গেছে।

এগুলো হচ্ছে

১. করোনা মোকাবেলায় প্রথম থেকেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে স্বাস্থ্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন নেতারা এবং আরও ওপর থেকে বারবার বলা হয়েছিল ফেব্রুয়ারি ও মার্চের বেশকিছু সময় ধরে। করোনা পরীক্ষার জন্য টেস্টিং কিট, পিপিইসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির পর্যাপ্ত মজুদ আছে বলেও তারা বলছিলেন। তারা এও বলছিলেন, ৮টি হাসপাতাল করোনা চিকিৎসার জন্য সম্পূর্ন প্রস্তুত রয়েছে। ‘করোনা মোকাবেলা কার্যক্রমে আমরা উন্নত দেশগুলোর চেয়েও এগিয়ে’-এমনটাও বলেছিলেন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নীতি-নির্ধারকরা।

২. আতংকিত হওয়ার কিছু নেই, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারি আশ্বাস।

৩. সরকারি ত্রাণ-সাহায্য পৌঁছে গেছে বা যাচ্ছে এবং ওএমএস কার্যক্রমে কোন দুর্নীতি করা হলে কঠিন-কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হবে মর্মে সরকার প্রধানের হুশিয়ারি। ৪. করোনা ভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাবিহীন যারা মারা গেছেন তাদের আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হলো না কেন এবং এখনও ব্যাপকভিত্তিক পরীক্ষা চালাতে বাঁধা কোথায়?

এসবের উত্তর সবারই জানা। কিন্তু সংক্ষেপে প্রতিটি প্রশ্নের পুরো শানে-নুযূল না বললেও দু’একটি ঘটনা দু’এক ব্যাক্যে মনে করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবো। কারণ এতো ঘটনার মধ্যে সব ঘটনা সবার মনে রাখাটা মুশকিল, আর এক্ষেত্রে আমি কয়েকটি জরিপ ও গবেষণা প্রতিবেদনেরও সহায়তা নেব এই কারণে যে, ক্ষমতাসীনদের যে মানসিকতা ও মনস্তত্ব এখনও বিদ্যমান তাতে ভিন্নমত পোষণকারীদের সহ্য করার সহমত বা সক্ষমতা এই দৈব-দুর্বিপাকেও গড়ে ওঠেনি।

চীনের উহানে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি করোনা বা কোভিড-১৯ ধরা পড়ে।

৩০ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচও এই পরিস্থিতিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পাবলিক হেলথ ইর্মাজেন্সি বা ‘স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা’ হিসেবে ঘোষণা করে। আর ১১ মার্চ ঘোষণা করে পেনডেমিক বা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারী হিসেবে। এরই মধ্যে বহু দেশ -যেমন ভিয়েতনাম, তাইওয়ান- করোনা প্রতিরোধ ও মোকাবেলা সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু করে দেয়। কোন কোন দেশ ‘বন্ধ দরজা নীতি’ও গ্রহণ করে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা তখন মগ্ন ছিলাম রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে এবং বক্তৃতা ও আশ্বাসের ওপরে। সম্ভবত স্বভাবজাতভাবে মোকাবেলা ও প্রতিরোধের আসল সংজ্ঞাও আমরা ভুলে গেছি। আনুষ্ঠানিক আর অনানুষ্ঠানিক বাহিনী দিয়ে বিরোধীদল, মত, পক্ষ, ব্যক্তিদের দমন-পীড়নের মাধ্যমে মোকাবেলা, আর করোনার মতো জীবনসংহারী মহামারী প্রতিরোধ,মোকাবেলা যে এক কথা নয়, সে বোধ-বুদ্ধিটুকুও নির্ঘাত ভুলেই গিয়েছিলাম।

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে ৩ জনের দেহে ৮ মার্চ। কিন্তু তখনও আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা ছিল, সবকিছু ছিল স্বাভাবিক। ১৪ মার্চও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, স্কুল-কলেজ বন্ধের পরিস্থিতি এখনও আসেনি (সমকাল ১৪ মার্চ ২০২০)। পরে হাইকোর্টের রীট আবেদনের পরে, বিভিন্ন মহলের প্রতিবাদ ও ক্ষোভের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়। কোয়ারেন্টিন, লকডাউনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাবলী গ্রহণের আইন ২০১৮ সালে করা হলেও তা আইনে রূপান্তর এবং অন্তর্ভুক্তকরণের সরকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি। হাইকোর্টের কড়া আদেশের পরে ১৯ মার্চ এ সম্পর্কিত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এরপরেও গেজেট জারি করতে ৪ দিন সময় নেয়া হয়। আর এরপর থেকে কোয়ারেন্টিন, লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ এসব বিষয়ে আইনের মাধ্যমে ব্যাবস্থাবলী প্রয়োগ সম্ভব হয়েছে। এভাবেই সবক্ষেত্রেই ঢিলেঢালা ভাব, আতংকিত হবেন না, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে জাতীয় যেসব বক্তব্য দেয়া হয়-তা আসলে বাস্তবকে চেপে যাওয়া ও বরাবরের ধামাচাপা দেয়ার সংস্কৃতিরই যে অংশ ছিল তা স্পষ্টতই বোঝা যায়। আর এভাবে অসংখ্য উদাহরণ দেয়া যায়। আর সবারই জানা বলে এ নিয়ে আর আলোচনা করে কোন লাভ নেই। ধারণা করছি, এসবকিছু আমার চাইতে পাঠকরা বা ভুক্তভোগীরা সীমাহীন কষ্টের মধ্যদিয়েই বুঝতে পারছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রথম থেকেই বলে আসছে করোনা চিকিৎসার একমাত্র বিষয় হচ্ছে টেস্ট। সংস্থার প্রধান বারবার বলেছেন, টেস্টই হতে পারে প্রধানতম সমাধান। প্রথমে বলা হলো- টেস্ট হচ্ছে, টেস্টিং কিট, পিপিইসহ সরঞ্জামাদি পর্যাপ্ত সংখ্যায় আছে। কিন্তু সময়ের কালে দেখা গেল বিপরীত চিত্র- ওসবই ছিল কথার কথা। এক্ষেত্রে ছোট্ট একটি বাস্তব ঘটনার কথা বলি। নানা দেশে যখন করোনা ছড়িয়ে পড়েছে মহামারী আকারে, তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ছোট্ট একটি দ্বীপরাষ্ট্রে কোন করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় না থাকায়, আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিল-দেশটিকে করোনামুক্ত রাখার রহস্যটি কী? ওই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাফ জবাব ছিল-‘আমাদের দেশে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কোন ব্যবস্থাই নেই। কোন পরীক্ষাও হচ্ছে না। কাজেই দেশটিতে কোন করোনা আক্রান্ত রোগীও নেই’।

বাংলাদেশও কি তাহলে ‘নো টেস্ট, নো করোনা’ নীতি গ্রহণ করেছিল? এখনও কি ‘কম টেস্ট, কম করোনা রোগী’ এই নীতি মেনে চলছে? তাই যদি না হবে তাহলে পুরো মার্চ মাসে ১০০টির বেশি পরীক্ষা করা হয়নি কেনো এবং সর্বপ্রথম ৮ এপ্রিল সর্বাধিক নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৯৮১টি (বাংলানিউজ, ৮ এপ্রিল)।

হাজারের বেশি টেস্টের জন্য অপেক্ষা করতে হয় ৯ এপ্রিল পর্যন্ত। বাংলাদেশের সংস্থা ‘গণস্বাস্থ্য’ যখন টেস্টিং কিট তৈরির ঘোষণা দেয়, তখন তাতে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর বদলে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া এবং মান সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে সরকারি দলের নেতারা অবৈধভাবে চীন থেকে অনির্ভরযোগ্য র্যা পিড টেস্টিং কিট আমদানি করে বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহ করছে। (নিউ-এইজ, ৬ এপ্রিল ২০২০)। একদিকে, পুরো বাংলাদেশকে করোনার ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা, অন্যদিকে, করোনা টেস্টের সংখ্যা সোয়া ২ হাজারের ঘর পার না হওয়া কিসের কারণে, তা বোধ করি সবাই বুঝতে পারছেন। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের নেতৃত্বে একটি জরিপে বলা হয়েছে, ‘সারাদেশে ৮ মার্চ থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত কোভিড-১৯ এর লক্ষণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩০। এই মৃত্যুগুলো সম্পর্কে সরকারিভাবে মৌনতা অবলম্বন কিংবা নিউমোনিয়া, সাধারণ জ্বর ও শ্বাসকষ্ট কিংবা হার্ট এ্যাটাক বলা হচ্ছে। কোভিড-১৯ এর লক্ষণে বেসরকারি তালিকায় এমন মানুষ আছেন যারা নির্ধারিত হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে আইইডিসিআর থেকে নমুনা সংগ্রহের অপেক্ষায় থাকাকালীন সময়ে মারা গেছেন। আবার চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন’। সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এই সংখ্যা এখন কমছেকম দু’শতাধিক হবে।

অথচ ৮টি হাসপাতাল তৈরি হয়েছে বলে অনেকদিন ধরে যা বলা হচ্ছে এবং শুনছি তা বাস্তবে কতোটা রয়েছে তা ভুক্তভোগী সবাই জানেন। আর যেগুলো রয়েছে সেগুলোরও পরিস্থিতিও ভয়াবহ। করোনা চিকিৎসা দেওয়া হয় এমন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার করুণ পরিস্থিতির চিত্র ১৭ এপ্রিল বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন নিউজে তুলে ধরা হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত রোগী এবং আক্রান্ত কিনা তা পরীক্ষার জন্য আসা- দু’দলকেই একই রুমে ‘গাদাগাদি’ করা আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। অথচ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেই যাচ্ছেন, এই মুহূর্তে শুধু করোনার জন্য নিবেদিত আইসিইউ প্রস্তুত রাখা আছে ১০০ থেকে ১৫০টি। দেশব্যাপী ৬ হাজার ৬৯৩টি শয্যা শুধু করোনার জন্যই আলাদাভাবে হাসপাতালে প্রস্তুত রাখা হয়েছে (প্রথম আলো, ৯ এপ্রিল ২০২০)।

এতোক্ষণ তো গেল করোনা সংক্রমণের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাগত দিক নিয়ে সরকারের কর্মকান্ডের আলোচনা। এবারে করোনার নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে খুব সংক্ষেপে কিছু আলোচনা করা প্রয়োজন। ইতিমধ্যে অর্থনীতির উপরে বিভিন্নভাবে করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যাপক মাত্রায়। গার্মেন্টসসহ ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে করোনার প্রভাব পড়েনি। তবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছেন এবং সংকটের মধ্যে রয়েছেন সমাজের নিম্নবর্গ ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা। ঢাকাসহ গ্রামে-গঞ্জে, সারাদেশে ত্রাণ এবং সামান্য সাহায্যের আশায় মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছেন, ছুটোছুটি করছেন। মানুষের দীর্ঘ লাইন, প্রতীক্ষা এমনকি অভাবি মানুষেরা ত্রাণের মালামাল লুণ্ঠন পর্যন্ত করেছে। দীর্ঘ সময় সরকার চুপ থাকার পরে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি বা ওএমএস চালু হলেও বেশুমার দুর্নীতির খবর সংবাদ মাধ্যমে ছাপা হয়েছে ও হচ্ছে। ত্রাণ সাহায্য এবং ওএমএসের চাল নিয়ে এমন পর্যায়ে দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে তাতে দেখা গেছে- ওইসব মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে মাটির তলা এবং পুকুরের মধ্য থেকেও। টিআইবি বলেছে, এসব দুর্নীতির সাথে জড়িতদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের সাথে সম্পৃক্ত। এদের শাস্তি জুটেছে শুধু মামলা অথবা চেয়ারম্যান-মেম্বার পদ থেকে বহিস্কার অথবা ডিলারশীপ বাতিল পর্যন্ত। আনু মুহাম্মদের নেতৃত্বে পরিচালিত জরিপে বলা হয়েছে, ‘ত্রাণ সহায়তা নিয়ে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর শাস্তির হুশিয়ারি সত্ত্বেও বিভিন্ন জেলায় চাল চুরি, ত্রাণ দেয়ার ছবি তুলে আবার ত্রাণ কেড়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে’। এসব কারনে ওএমএস বন্ধ করে দেয়া হয়। অথচ জরিপে দেখা গেছে, ১ মার্চ থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। ওই জরিপে বলা হয়েছে, ‘গুমসহ এ জাতীয় কর্মকান্ড এ সময়ে ঘটেছে নিয়মমাফিক।

তবে সমাজের নিম্নবর্গ ও নিম্ন আয়ের মানুষেরসহ অনেকেরই পরিস্থিতি কতোটা ভয়াবহ তা বোঝার জন্য কয়েকটি সংস্থার জরিপের ফলাফল দেখা যেতে পারে। এসব প্রভাবশালী গবেষণা ও মানবিক সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান তাদের জরিপের ফলাফলে বলেছে, সমাজের নিম্নবর্গ এবং নিম্নআয়ের মানুষ ইতোমধ্যে করোনার নেতিবাচক প্রভাবে খাদ্যাভাব, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, খাদ্য নিরাপত্তার অভাবসহ চরম অর্থনৈতিক ঝুঁকি ও সংকটের মধ্যে পড়েছেন। বিশ্বের বৃহৎ এনজিও ব্র্যাকের সদ্য সমাপ্ত জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে ৭৪ শতাংশ মানুষের ঘরে খাবার নেই এবং চরম দারিদ্র্য বেড়েছে শতকরা ৬০ শতাংশ। এতে আরও বলা হয়, ওই জরিপকালে ২৯ শতাংশ মানুষের ঘরে ১-৩ দিনের খাবার ছিল। আরেকটি গবেষণা সংস্থা পিপিআরসি অন্য একটি জরিপে বলেছে, করোনার কারণে লকডাউনসহ এ জাতীয়  কর্মকাণ্ডের  প্রভাবে শতকরা ৭০ শতাংশ মানুষের আয় কমে গেছে। অর্থনৈতিক কর্মকান্ড থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন ৭১ শতাংশ মানুষ। এছাড়া প্রভাবশালী গবেষণা সংস্থা সিপিডিসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান একই ফলাফল প্রকাশ করেছে। দিনে দিনে পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরো বেশি খারাপের দিকে যাচ্ছে।

ঘোষিত প্রনোদনা সম্পর্কে এখনই সুস্পষ্ট ব্যবস্থা নেয়া জরুরী, অন্তত কৃষিখাতের জন্য।
কিন্তু এসব ঘটনাবলী চোখে দেখে-শুনেও কিছু বলার বা করার উপায় নেই। কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ মানুষ খবর দেখতে পারে এমনসব মাধ্যমের ওপরেই রয়েছে নজরদারী। বলা হচ্ছে- গুজব, আতংক সৃষ্টিকারী বা এ জাতীয় বিষয়গুলো প্রচার-প্রচারণা করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অবস্থাটা দাঁড়িয়েছে এমন যে, যা বলা হবে তাই বিশ্বাস করতে হবে। যারা ওই আশ্বাসে বিশ্বাস ভঙ্গকারী তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। আতংকা বা তথাকথিত মিথ্যা সংবাদের শাস্তি আইসিটি এ্যাক্টে মামলা এবং কিছুকালের কারাবাস।র
আনু মুহাম্মদের নেতৃত্বে পরিচালিত জরিপে বলা হয়েছে, ‘করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই তথ্যপ্রবাহ রোধ করার উদ্দেশ্যে চিন্তা, বিবেক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরকার আঘাত করছে’।

এক্ষেত্রে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে সামান্য উপদেশ –আগের উপদেশ স্থগিত রেখে নতুন উপদেশ মেনে চলুন। নতুন উপদেশ হচ্ছে- যাই ঘটুক না কেন, যাই দেখেন না কেন ‘চোখ, কান, মুখ বন্ধ রাখুন’। আশ্বাসে বিশ্বাস রাখুন। তবে একথাটিও সত্য যে, বাস্তবকে কোনভাবেই চেপে রাখা যায় না।

কিন্তু ইতিহাসের শিক্ষা – এটাই শেষ কথা হতে পারেনা। মানুষ পরাজিত হয়নি বা হয়না কখনও; বাধা-বিঘ্ন পেরিয়ে, নানা কিছু হরিয়ে তারা উঠে দাড়ায়,বারবার উঠে দাড়ায়, দাড়িয়েছে। তবে যারা ইতিহাসের শিক্ষাকে উপেক্ষা করে, আখেরে ক্ষতিটা আসলে তাদেরই। এক্ষেত্রে কবি সুধীন্দ্র্রনাথ দত্তের উটপাখী কবিতাটি তাদের জন্যে প্রযোজ্য- ‘‘অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে?/ আমাকে এড়িয়ে বাড়াও নিজেরই ক্ষতি।/ ভ্রান্তিবিলাস সাজে না দুর্বিপাকে।’’

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।