রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪৪ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
„উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর : উত্তরার ‘সুলতান’ কেএই ইমরান

ডেক্স রিপোর্ট :  নাম তার  ইমরান হোসেন ওরফে সুলতান। শুধু নামে নন, তাঁর কর্মকাণ্ড ও আচার-আচরণ এমন যে অনেকে তাঁকে ‘অত্যাচারী’ সুলতান বলেন।

সুলতানের ‘সালতানাত’ চলছে রাজধানীর উত্তরার বৃন্দাবন ও আশপাশের এলাকায়, যা উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরের মধ্যে পড়েছে। সুলতান অবৈধভাবে রাজউকের জমিতে বস্তিঘর তৈরি করে চড়া ভাড়া আদায় করেন। নিজেই গভীর নলকূপ বসিয়ে বস্তিতে পানি সংযোগ দেন। বিদ্যুতের সংযোগ দিয়ে ইচ্ছেমতো বিল আদায় করেন। সুলতানের আরও রয়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের গ্যারেজ, যেখানে অবৈধভাবে ব্যাটারি চার্জ দেওয়া হয়। তিনি রাজউকের জমিতে অবৈধভাবে দোকান বসিয়ে ভাড়াও দেন।

দোকানি, বস্তিবাসী ও রিকশাচালকদের সঙ্গে কথা বলে এবং হিসাব করে দেখা যায়, এভাবে সুলতান মাসে প্রায় ৯ লাখ টাকা আয় করেন।

বস্তিবাসীর কাছ থেকে উচ্চ হারে ভাড়া, পানি ও বিদ্যুতের বিল আদায় করলেও সুলতানের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পান না। তিনি নিজেকে স্থানীয়ভাবে যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দেন। ঢাকা উত্তর সিটির ৫২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ পেতেও তিনি দৌড়ঝাঁপ করছেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, উত্তরার ওই এলাকায় নিম্ন আয়ের মানুষদের থাকার জায়গা তেমন একটা নেই। এ কারণে তারা অত্যাচারের মধ্যেও বাধ্য হয়ে সুলতানের বস্তিতে থাকে। বেশি টাকা নেওয়ার বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে তাঁকে বস্তি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

সেখানে বস্তিঘর ও দোকান তুলে ভাড়া আদায় করা হয়, পানি ও বিদ্যুতের সংযোগ দিয়ে বিল আদায় করা হয়, তা অবশ্যই অবৈধ। অবরাদ্দকৃত জায়গার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।

হাফিজুল ইসলাম, প্রকল্প পরিচালক, রাজউক

জমি দখল ও বস্তিবাসীর অত্যাচারের অভিযোগের বিষয়ে সুলতানের বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে সম্প্রতি তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুতের সংযোগ বাণিজ্যিক। সেখান থেকে যত খুশি তত সংযোগ দেওয়া যায়। ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক চার্জ দেওয়া এবং রাজউকের প্লটে বস্তিঘর নির্মাণ করে ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দেখা করে কথা বলতে বলেন। কথা অনুযায়ী তাঁর সঙ্গে দেখা করতে সম্প্রতি উত্তরায় যাওয়ার পর তিনি আর ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি।

বস্তিঘর দোকানভাড়ায় দেড় লাখ : উত্তরায় রাজউকের আবাসন প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের বাণিজ্যিক প্লট এখনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। আর কবরস্থান ও খেলার মাঠের জন্য রাখা জমি খালি। এসব খালি প্লট ও রাস্তার পাশের উন্মুক্ত জায়গা দখল করে বস্তিঘর করা হয়েছে। কিছু কিছু আবাসিক প্লটেও গড়ে উঠেছে বস্তিঘর। স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, বৃন্দাবন এলাকায় সুলতান ও তাঁর মামা রহিম বাদশাহ ওরফে রুম বাদশাহ নিয়ন্ত্রণ করেন প্রায় ৪০টি বস্তিঘর। রহিম বাদশাহ সাবেক হরিরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি।

বাঁশ, কাঠ ও টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি বস্তিঘর ও ১৫টি দোকান থেকে সুলতান ভাড়া তোলেন মাসে প্রায় দেড় লাখ টাকা।

নিজেই বসিয়েছেন নলকূপ : উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরের চান্দুরার টেক নামে পরিচিত এলাকায় সুলতান একটি গভীর নলকূপ (সাবমার্সিবল পাম্প) বসিয়েছেন। নলকূপটি থেকে ‘অবৈধভাবে’ তিনি চান্দুরা, চান্দুরার টেক ও মান্দুরা এলাকার প্রায় ১৯০টি বস্তিঘরে পানি সরবরাহ করেন।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, সুলতান প্রতিটি বস্তিঘর থেকে মাসে ন্যূনতম ৫০০ টাকা করে পানির বিল ওঠান। কোনো বস্তিঘরে বসবাসকারী পরিবারের সদস্যসংখ্যা বেশি হলে কিংবা গবাদিপশু থাকলে বিল নেওয়া হয় এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা। বস্তির বেশির ভাগ পরিবারেই হয় সদস্যসংখ্যা বেশি, নয়তো গবাদিপশু পালন করা হয়। ঘরপ্রতি ৬০০ টাকা ধরে হিসাব করে দেখা যায়, সুলতানের আয় ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা।

একটি বাতির বিল ২০০ টাকা : বস্তিবাসীর কাছ থেকে উচ্চ হারে বিদ্যুৎ বিল আদায় করেন সুলতান। একটি বাতি জ্বালালেই তাদের মাসে ২০০ টাকা দিতে হয়। একটি বৈদ্যুতিক পাখা বা ফ্যানের জন্য ২০০ টাকা, টেলিভিশন থাকলে আরও ২০০ টাকা এবং রেফ্রিজারেটর থাকলে বাড়তি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা দেওয়া লাগে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরের প্রায় ৪০০টি বস্তিঘর ও ১৫টি দোকানে সুলতানের নিয়ন্ত্রণাধীন বৈদ্যুতিক সংযোগ রয়েছে। এসব ঘর ও দোকান থেকে তিনি মাসে প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা আদায় করেন।

ঢাকা বিদ্যুৎ সরবরাহ কোম্পানিতে (ডেসকো) খোঁজ নিয়ে সুলতানের নিজের নামে চারটি বিদ্যুতের সংযোগ পাওয়া গেছে। তাঁর মা ফরিদা বেগমের নামে রয়েছে আরেকটি সংযোগ। এর বাইরে সুলতান আরও কয়েকটি অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। উত্তরা পশ্চিম থানা-পুলিশ জানায়, অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ায় সম্প্রতি সুলতানের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত মামলা করেছিল। সেই মামলায় তিনি জামিনে রয়েছেন।

বৃন্দাবন এলাকায় সুলতানের ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের গ্যারেজ আছে পাঁচটি। এতে রাখা হয় প্রায় ১১০টি ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ১০টি ইজিবাইক। রিকশাপ্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা ও ইজিবাইকে ৬ হাজার টাকা করে নেওয়া হয় চার্জ দেওয়ার জন্য। এ থেকে সুলতানের আয় প্রায় ৪ লাখ টাকা।

রাজউকের উত্তরা তৃতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের পরিচালক হাফিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সেখানে বস্তিঘর ও দোকান তুলে ভাড়া আদায় করা হয়, পানি ও বিদ্যুতের সংযোগ দিয়ে বিল আদায় করা হয়, তা অবশ্যই অবৈধ। অবরাদ্দকৃত জায়গার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। প্রথম আলো

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।