সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২০ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপে খোলা চিঠি

ড. শরীফ আস্-সাবের :

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণে বেসরকারী সংস্থা, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত একটি টেস্ট কিটের সরকারী অনুমোদন বিষয়ে আপনার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

ইতিমধ্যে, এই টেস্ট কিটের অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ অসহযোগিতা করছে এমন একটি অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে সরকারের ঔষধ প্রশাসন। এদিকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত করোনা শনাক্তকরণ কিট চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে পৌঁছে দেয়া হলেও তা কেউ গ্রহণ করেননি বলে জানিয়েছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। প্রশ্ন উঠছে, গণস্বাস্থ্য উদ্ভাবিত এই কিটটির কার্যকারিতার সঠিকভাবে পর্যালাচনা করলে ক্ষতি কি? দেশীয় এই উদ্যোগ একেবারে যাচাই বাছাই না করেই ভন্ডুল করে দেয়াটা কি ঠিক হচ্ছে?

ঔষধ প্রশাসন ব়্যাপিড টেস্ট কিটের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। কেউ কেউ এর ভ্যালিডিটি নিয়ে পত্রপত্রিকায় প্রশ্ন তুলছেন। কেউ আবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দোহাই দিচ্ছেন, বলছেন, বিশ্ব স্বাস্হ্য সংস্থার অনুমোদনবিহীন এই কিট ব্যবহার করা যুক্তিযুক্ত হবে না।

তবে, মনে রাখতে হবে. দ্রুত শনাক্তকরণ করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তির প্রথম পূর্বশর্ত। একজন কর্তব্যরত চিকিৎসক যদি কোন কারণে করোনা রোগী হিসেবে সন্দেহভাজন হন, তাহলে দ্রুততার সঙ্গে টেস্ট করতে না পারলে তা সেই ডাক্তার এবং তাঁর সহকর্মী ও রোগীদের জন্য সৃষ্টি করতে পারে বিপজ্জনক পরিস্থিতির।

যদি দ্রুততার সঙ্গে একজন চিকিৎসকের টেস্ট না করা যায়, তাহলে তাঁর টেস্টের ফলাফল না পাওয়া পর্যন্ত সেই চিকিৎসকের সেবা থেকেও বঞ্চিত হবে মানুষ। সে কারণেই এই জাতীয় কিটের ব্যবহার ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বে। এই কিটের মাধ্যমে সাধারন্ের দ্রুততার সঙ্গে টেষ্ট করতে পারলে এই রোগের আক্রমন ও বিস্তারও ঠেকানো সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিজস্ব ওয়েবসাইটে এই ধরণের উদ্ভাবনীকে স্বাগত জানানো হয়েছে। তবে এ বিষয়ে গবেষণা অবশ্যই ল্যাব ভিত্তিক এবং তা প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে চুড়ান্ত করতে হবে বলে অভিমত দেয়া হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়া জরুরী ভিত্তিতে প্রথম ব়্যাপিড টেস্ট কিটের অনুমোদন দেয় ২৩শে মার্চ। ১০ই এপ্রিল দেশের থেরাপিউটিক ঔষধ প্রশাসন ‘রিয়েল টাইম’ টেস্ট কিটেরও অনুমোদন দেয়। ফলশ্রুতিতে করোনাভাইরাস শনাক্ত এবং দমনে অস্ট্রেলিয়া অনেকের চাইতে এগিয়ে আছে। উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ায় অনুমোদনপ্রাপ্ত ব়্যাপিড টেস্ট কিটের কার্যকারিতা প্রায় শতভাগ (উদাহরণ স্বরূপ, অস্ট্রেলিয়ায় অনুমোদিত একটি ব্র্যান্ডের ব়্যাপিড টেস্ট কিটের সংবেদনশীলতা ৯৬.৯ এর বেশী এবং নির্দিষ্টতা ৯৯.৪% বলে দাবী করা হয়)। সুতরাং, ব়্যাপিড কিট হলেই তার কার্যকারিতা কম হবে এমন কোন কথা নেই।

বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের জন্য এই ব়্যাপিড টেস্ট কিট একটি নতুন আবিষ্কার। এটি হবে সহজলভ্য এবং সস্তা। এই কিটের উদ্ভাবক বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল মনে করেন এই নতুন আবিস্কৃত কিটটি ‘ইউনিক’ এবং তা ‘কোনো পজিটিভ কেসকে বাদ দেবে না’। ড. শীলের বক্তব্য অনুযায়ী, এই কিট শরীরে এন্টিজেন এবং এন্টিবডি দু’টোই নির্নয় করতে সক্ষম হওয়ায় করোনাভাইরাস শনাক্তে তা প্রায় নির্ভুল (near perfect) সঠিকতা প্রদান করবে।
যদি প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার পর এই কিটের কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়, তা’হলে সরকার সহজেই এই কিটটির বাজারজাতকরণের জন্য অনুমতি দিতে পারে। এমন কি এই নিরীক্ষণের কাজে সরকার বিশ্ব স্বাস্হ্য সংস্থার সহযোগিতাও চাইতে পারে এবং উপযুক্ত নিরীক্ষা শেষে যদি দেশীয় এই ব়্যাপিড টেস্ট কিটটি অকার্যকর প্রতীয়মান হয়, সরকার সঙ্গত কারণেই এর অনুমোদন করা থেকে বিরত থাকতে পারে। প্রসঙ্গত: উল্লেখযোগ্য, বিশ্ব স্বাস্হ্য সংস্থা কোন ঔষধ বা টেস্ট কিটের অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ নয়।

তবে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
এই বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারকে অবলীলায় অবজ্ঞা করার কোন সুযোগ বা যুক্তি আছে বলে আমি মনে করি না। এই মহা দুর্যোগকালীন সময়ে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় এই কিট হতে পারে এক সহজলভ্য এবং মোক্ষম অস্ত্র। একই সঙ্গে, তা দেশের জন্য বয়ে আনতে পারে প্রভূত সুনাম, সম্মান ও অর্থ। এই আবিষ্কার করোনা বিধ্বস্ত গোটা পৃথিবীর জন্যও হতে পারে এক বিশেষ উপহার।

বলে রাখা দরকার, এই কিটের আবিষ্কারক ড.শীল উড়ে এসে জুড়ে বসা কোন বিজ্ঞানী নন, তিনি বাংলাদেশের গর্ব এবং একজন আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন জীবাণুবিজ্ঞানী। তিনি ইতিপূর্বে সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্ট এজেন্সিতে চাকুরীরত অবস্থায় সাফল্যজনকভাবে ভাইরাস মোকাবেলায় ভ্যাকসিন তৈরী করেছেন যা তাঁর নামে প্যাটেন্টও হয়েছে। আমি মনে করি, এই মুহূর্তে সরকারের উচিত দীর্ঘসুত্রিতা কিংবা অন্তরায় সৃষ্টি না করে এই উদ্যোগকে যথাযথ উৎসাহ ও প্রনোদনা দেয়া।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এ বিষয়ে আমি আপনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি যাতে করে যথাসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে এই কিটের প্রয়োজনীয় নিরীক্ষা সাপেক্ষে বাজারজাতের ব্যবস্থা করা যায়। আর বাঁচার জন্য এবং দেশের সতেরো কোটি মানুষের করোনা নিরাপত্তার জন্য এইটুকু চাওয়া তো আপনার কাছে আপনার প্রিয় দেশবাসীর থাকতেই পারে।
….
লেখক, অস্ট্রেলিয়ার আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক বানিজ্য ও সুশাসন বিষয়ে অধ্যপনা করেন

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।