সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৪০ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
৯ লাখ গ্রাহকের ভোগান্তি চরমে : মগবাজারে ক্যাবল কেটে সারাদেশে টেলিফোনসেবা বিচ্ছিন্ন
স্টাফ রিপোর্টারকিছুদিন পরপরই কেটে যাচ্ছে বিটিসিএলের ক্যাবল : মোবাইল অপারেটরদের সুযোগ দিতেই এসব হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে গ্রাহকদের।
ঢাকার মগবাজার এলাকায় রাষ্ট্রয়াত্ত টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান বিটিসিএলের একটি ‘কোর ক্যাবল’ কাটা পড়ায় ভেঙে পড়ে সারাদেশের টেলিফোন সেবা। ব্যাহত হয় ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসাখাত, পুলিশের সকল থানা, ফায়ার সার্ভিসের জরুরি টেলিফোন সেবা। তবে এবারই প্রথম নয়, কিছুদিন পরপরই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিটিসিএলের ক্যাবল কেটে যাওয়ায় বিকল হয়ে যায় টেলিফোন। একদিকে নিম্নমানের সেবার কারণে ক্রমশ: কমছে বিটিসিএলের গ্রাহক সংখ্যা। অন্যদিকে কিছুদিন পরপরই এধরণের ভোগান্তির কারণে রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা। অভিযোগ রয়েছে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সুবিধা দিতে একটি চক্র এর সাথে জড়িত রয়েছেন।
৭ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মগবাজারের দিলু রোডে সিটি কর্পোরেশনের সংস্কার কাজের সময় বিটিসিএলের কোর ক্যাবল কাটা পড়ে। এতে মধ্য রাত থেকেই সারাদেশের টেলিফোন সেবা ভেঙে পড়ে। যে এলাকায় টেলিফোন সংযোগ কেবল সেই এলাকার একটি অংশ ছাড়া দেশের অন্য যে কোন অংশের সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। আর এতে দিনভর ভোগান্তিতে পড়েন টেলিফোন গ্রাহকরা। বিটিসিএল সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে বর্তমানে প্রায় নয় লাখ ল্যান্ডফোন গ্রাহক রয়েছেন। এই ক্যাবল কেটে যাওয়ায় প্রায় সব গ্রাহকই সমস্যায় পড়েছেন।
একে বড় ধরনের ক্ষতি উল্লেখ করে বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহফুজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, একে বড় ধরণের ক্ষতি বলা যায়। অনেকে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে টেলিফোনে কথা বলতে পারছেন না। যেমন মহাখালী এলাকার গ্রাহক হয়ত শুধু মহাখালীতেই কথা বলতে পারছেন, অন্য এলাকায় ফোন দিলে কাজ হচ্ছে না। আবার মোবাইল থেকে টেলিফোনে বা টেলিফোন থেকে মোবাইলে ফোন দিতেও সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, এই মূল ক্যাবল মূলত টেলিযোগাযোগের হার্টের মত। এ সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পুরো দেশে টেলিযোগাযোগে সমস্যা তৈরি হয়েছে।
তবে এধরণের ঘটনা কেবল এবারই প্রথম ঘটেছে তা নয়, বরং কিছুদিন পরপরই রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন অংশে বিটিসিএলের ক্যাবল কাটা যাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে রাজধানীতে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় রাস্তা খোড়াখুড়ির সময় প্রায়ই এ ঘটনা ঘটে থাকে। আবার একবার ক্যাবল কেটে গেলে তা মেরামত করতেও দীর্ঘ সময় নিয়ে নেয় টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানটি। নিম্নমানের সেবার কারণে এমনিতেই বিটিসিএলের গ্রাহক প্রতিনিয়ত কমছেই। খুব বেশি জরুরি না হলে এখন টেলিফোন কেউ ব্যবহার করছেন না। আর কিছু গ্রাহক ব্যবসায়িক কারণে টোলিফোন ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত যেসব গ্রাহক টেলিফোন ব্যবহার করছেন তাদের ধরে রাখতেও অক্ষম হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। বরং বিটিসিএলের অদুরদর্শিতা ও অবহেলার কারণে তাও যায় যায় অবস্থা। অভিযোগ রয়েছে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সুবিধা দিতেই বারবার টেলিফোন সেবা বিকল করে দেয়া হচ্ছে। এতে গ্রাহকরা যেমন টেলিফোন সেবার প্রতি নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। অন্যদিকে টেলিযোগাযোগ সেবায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যকারিতা হ্রাস পাচ্ছে। মগবাজার এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, গতকাল সকাল থেকেই তিনি ফোন বন্ধ পাচ্ছেন। বিটিসিএলের এই গ্রাহক বলেন, এমনিতে খুব জরুরি প্রয়োজন না হলে টেলিফোন ব্যবহার করিনা। তার উপর বিল নিয়ে সমস্যা, লাইন বার বার কেটে যায়। ইস্কাটন এলাকার গ্রাহক জসিমউদ্দিন বলেন, টেলিফোনকে এখন কথা বলার জন্য আর ব্যবহার করি না, বাসায় একটি টেলিফোন থাকা প্রয়োজন এজন্য রেখেছি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, টেলিফোন সেবা যদি ভাল হয় তাহলে মোবাইল কোম্পানিগুলো চলবে কি করে। সবাই যোগসাজস করেই টেলিফোন শিল্পটাকে ব্যর্থ করার কাজ করছে। মতিঝিল এলাকার হাবিবুর রহমান বলেন, কয়দিন পরপরই দেখি টেলিফোন লাইন কেটে যায়। বিটিসিএল কি করে? যেসব এলাকায় কাজ হয়, সেখানে তদারকি করতে পারে না? আবার যখন কেটে যায় তা ঠিক করতেও অনীহা দেখা যায়। তিনি বলেন, আমার তো মনে হয়, তারা মোবাইল কোম্পানিগুলোকে রাজস্ব দিতেই এসব করাচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক আলী আহাম্মেদ খান জানান, ঢাকায় তাদের বিটিসিএল নম্বরগুলো ভোরে আকস্মিকভাবে বিকল হয়ে যায়। এসব নম্বর থেকে কোথাও ফোন করা যাচ্ছে না; আসছেও না। ফলে কোথাও অগ্নিকান্ড বা দুর্ঘটনা ঘটলে সেই তথ্য ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষকে জানাতে পারছেন না কেউ। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের নির্ভর করতে হচ্ছে দুটি মোবাইল ফোনের ওপর।
এসব বিষয়ে বিটিসিএলের পরিচালক (জনসংযোগ ও প্রকাশনা) মীর মোহাম্মদ মোরশেদ জানান, শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত টেলিফোন সেবা বন্ধ ছিল। মগবাজার দিলু রোডে সিটি করপোরেশনের সংস্কার কাজের মধ্যে টেলিফোনের ওই ‘কোর ক্যাবল’ কাটা পড়ে। বিটিসিএল এমডিসহ অন্যরা দ্রুততার সাথে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। সিটি কর্পোরেশনকে সতর্কতার সাথে কাজ করার বিষয়ে কোন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা অনুরোধ করি কিন্তু তারা সরকারি প্রতিষ্ঠান। আর সিটি কর্পোরেশন কাজ দেয় কন্ট্রাক্টে, ফলে তারাও এসব বিষয়ে তেমন গুরুত্ব দেয় না।
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।